রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : পবিত্র ঈদ উল আযহা উদযাপন উপলক্ষে  ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নেকমরদ হাট গতকাল রবিবার বসেছিল। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্য বিধি মানার নির্দেশকে উপেক্ষিত করে অবাধে হাটে ক্রেতা বিক্রেতারা চলেছে।

বাংলা ১৪২৭ সনে হাট ইজারা দেওয়া নিয়ে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায়। বর্তমানে উপজেলা হাট বাজার ইজারা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার তত্বাবধানে চলছে নেকমরদ হাট। প্রশাসনিক তত্বাবধানে চললেও সেই হাটেই স্বাস্থ্য বিধি মানার নিয়ম উপেক্ষা করা হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনায়কেই এর জন্য দায়ী করেছেন। এদিকে প্রশাসনের তত্বাবধানে চলা হাটে আদায় করা হয়েছে অতিরিক্ত ইজারা বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার উপজেলার আরেক বড় হাট কাতিহারেও অতিরিক্ত ইজারা আদায় করা হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী এ নেকমরদ হাট সপ্তাহের প্রতি রোববার নেকমরদ -বাালিয়াডাঙ্গী মহাসড়ক ঘেষে হাটের নিজস্ব জমিতে বসে। হাটে গরু ছাগল সাইকেলসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের হাসিল অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ হাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাট পরিচালনার নির্দেশকেও বৃদ্বাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটের শুরুতেই জেলা প্রশাসনের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যের হাসিল আদায়ের দর সম্বনিত একটি বিশাল সাইনবোর্ড বাশঁ দিয়ে সাটানো। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে সাইনর্বোডের হাসিল আদায়ের দরের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল সহ ব্যাপক মানুষজনের ভিড়। কেউ গরু কেউ বা ছাগল কিনছে। কেউ আবার বিক্রি করছে। তবে ভোগান্তিরও শেষ নেই ক্রেতা বিক্রেতাদের। নেই অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতার মুখে মাস্ক। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী দুরত্ব বজায় রেখে হাটে কেনাবেচা করার নির্দেশনা থাকলেও। তা উপেক্ষা করে শরীরে শরীর ঘেঁষে করা হয়েছে কেনা বেচা।

হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল থাকলেও হাসিল জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দরে নেওয়া হচ্ছে না। হাটে গরু ছাগলের অনন্ত দশজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন সাইনর্বোডে গরু প্রতি টোল ২৩০ টাকা হলেও ইজারাদার নিচ্ছে ৩২০ টাকা। ছাগল ৯০ টাকা হলেও ১৫০ টাকা দরে আদায় করা হচ্ছে। এদিকে সাইকেলের ইজারা ১১০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৩১০ টাকা।

উপজেলার হাটগাঁও গ্রামের গরু ক্রেতা সুমন পাটেয়ারী অভিযোগ করে বলেন,একটি গরু কিনে দিতে হলো ৩২০ টাকা। অথচ হাট প্রবেশ পথে সরকারী সাইনর্বোডে গরু ইজারা লেখা রয়েছে ২৩০ টাকা। যদি সরকারী দর ২৩০ টাকায় হয়। তাহলে একটি গরুতে আমার কাছে বেশি নেওয়া হল ৯০ টাকা। একইভাবে ছাগল ক্রেতা আনিসুল বলেন, একটি ছাগলে ইজারা দেওয়া হয়েছে ১৫০ টাকা।

জেলা প্রশাসনের হাসিল (ইজারা) আদায়ের তালিকা ঘেটে দেখা যায়, সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়া হাটে নিয়োগকৃত ইজারাদার গরু প্রতি ২৩০ টাকা ছাগল প্রতি ৯০ টাকা সাইকেল প্রতি ১১০টাকা আদায় করবে। অথচ প্রশাসনের দেওয়া দর উপেক্ষা করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত হাসিল।

হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা রুকুনুল ইসলাম ডলার তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, এখানে এসে দেখছি দেশে যে কোভিড-১৯ নামে একটি ছোয়াচে ভাইরাস রয়েছে তা মানার কোন বালাই নেই। তাছাড়াও প্রশাসনের কাউকেও দেখলাম না এটি স্মরণ করে দিয়ে সচেতন করতে। এছাড়াও সরকারী দর উপেক্ষা করে আদায় করা হচ্ছে ইজারা।

একইভাবে স্কুল শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এভাবে গরু হাট বসিয়ে আমাদের উপজেলাকে আরো বিপদের দিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। নেই কারো মাঝে সামজিক দুরত্ব। এমন অভিযোগ হাটে আসা অনেকের রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, মোট ৩৯ জন ব্যক্তি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এর মধ্যে ২৯জন সুস্থ হয়েছেন । ৮ জন রয়েছেন চিকিৎসাধীন। এবং একজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দুজন ব্যক্তি মারা গেছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক ফিরোজ আলম বলেন, মুখে মাস্ক এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল অব্যশই করতে হবে। না হলে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। তাছাড়াও বিপুল মানুষের জনসমাগমে কোভিড-১৯ ছড়ানোর আশংকা সব চেয়ে বেশি রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার বক্তব্য নিতে ফোনে এবং অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায় নি।

(কেএস/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২০)