আলাউদ্দিন হোসেন


তিন বন্ধু - জীবন, নাহিদ হাসান ও আমি সেদিন বিকেলবেলা বাইক করে আশেপাশেই ঘুরছিলাম, কোথাও যেন ভালো লাগছিলো না! ভাবছি কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় গেলে একটু ভালো লাগবে,তেমন কোন জায়গাই খুজে পাচ্ছিলাম না।

হঠাৎ করে বন্ধু জীবন বললো,চল আজকে তোদের একটা বর্ষা প্রকৃতিতে নিয়ে যাবো,যেখানে সরাসরি বর্ষার রুপ চোখে মেলে, বর্ষা প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, আপন মনে হেসে চলে হাজারো শাপলা।

ওর বলতে যতক্ষণ,সেখানে যেতে রাজি হতে ততক্ষণ লাগেনি আমাদের। আমারা দু'জন তো সমস্বরে বলে উঠলাম চল তারাতাড়ি!
কোথায়, কতদূর কিছু জিজ্ঞেস না করে বাইক চালানো শুরু করলো নাহিদ।

যাত্রা শুরু,বাইক চলছে... সবার মনটাই খুশি খুশি লাগছে।
চলতে চলতে ৩৫ কিঃ মিঃ পথ চলে এসেছি, এবার পাকা রাস্তা থেকে সাইডে কাঁচা রাস্তা ধরে যেতে হবে। মিনিট পাঁচেক রেস্ট নিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে যাচ্ছি, আহ্ কি অপরুপ বর্ষা প্রকৃতি! কি অপরুপ দৃশ্য! তা আর বলে বোঝাতে পারছি না।

রাস্তার দু'পাশে পানি আর পানি,পানির উপর ভাসছে আমন ধান। হালকা ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ধানের পাতাগুলো পানির উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে, এ যেন চোখে তাক লাগানো দৃশ্য।

এমন মনোরম বর্ষা প্রকৃতি দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। বেশ ভালোই লাগছে। কিছুক্ষণ যেতেই সামনে একটা ব্রিজের দেখা পেলাম, কাঁচা রাস্তায় মাঝে ব্রিজ, তারপর আবার দু'পাশে পানি থৈ থৈ করছে। সবমিলিয়ে খুব ভালো লাগছে আমাদের।

ব্রিজের উপর বাইক ঠেকিয়ে এবার যাওয়ার পালা সেখানে, যেখানে খেলা করে হাজারো শাপলা, সন্ধ্যা হলে প্রকৃতি হাসে আপন মনে।

তিনজন পায়ে হেটে যাচ্ছিলাম, দু’পাশের দৃশ্যগুলো অমায়িক সুন্দর ছিলো।

মনোরোম দৃশ্য দেখতে দেখতে শাপলা বিলের ধার প্রান্তে চলে এসেছি,এমন সময় বিলের পাড়ে একটা নৌকা দেখতে পেয়ে আমরা তো আনন্দে আত্মাহারা!

কার নৌকা, জানার চেষ্টা না করেই তিনজন নৌকায় উঠে বসলাম। বলে রাখা ভালো,নাহিদ আবার নৌকায় উঠতে বেশ ভয় পায়। আমি বললাম মাঝখানে বসে পর সমস্যা নাই, আমি তো নৌকা চালাতে পারি বেশ।

জীবন নৌকার সামনে গিয়ে বসলো,আর আমি শেষ মাথায় বসে বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকা চালাচ্ছিলাম। নৌকা চালানো খুব কষ্টের ছিলো,কারন চারপাশে শাপলাতে ভরপুর।

তাই বৈঠা চালাতে কষ্টকর ছিলো। আস্তে নৌকা চালাচ্ছি আর চারপাশের শাপলাগুলো মন ভরে দেখছি, দেখতে দেখতে গোধূলির ছায়া নেমে এসেছে। নৌকার চারপাশ থেকে ইচ্ছেমত শাপলা তুললাম। অনেক সময় তিনজন শাপলা ও ড্যাপ তুলে নৌকা সাজিয়ে তীরে ফিরে আসলাম।

তীরে এসে নৌকা খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে শাপলাগুলো পানিতে ভালো করে পরিস্কার করে নৌকা থেকে নেমে আসলাম।
ব্রিজের উপর গিয়ে একটু রেস্ট নিতে নিতে শাপলাগুলো থেকে পানি শুকিয়ে গেলো, সবগুলো শাপলা একসাথ বেধে কাধে করে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম।


লেখক : শিক্ষার্থী (এমবিএ) সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, পাবনা।