রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ‘কাগজপত্র থাক বা না থাক মুজিবরের জায়গা দখল করে রাখা চলবে না। হিন্দু মহিলাদের যেখানে পাব সেখানে বেড়িয়ে সোজা করে দেবো। ঘর থেকে বের হলেই কাপড় খুলে নেবো। কোন মা কা লাল এর বুকের পাটা আছে যে হাত কাটা মান্নানের কথা শুনবে না। রাতের মধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশ না ছাড়লে শহরের যেখানে পাব সেখানে হাত পা ভেঙে গুড়িয়ে দেব।’

বৃহস্পতিাবর সন্ধ্যার পর ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে এসে সাতক্ষীরার বাঁকাল খেয়াঘাট জেলে পাড়ায় নিরঞ্জন মাখাল ও আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ন চন্দ্র মণ্ডলের মেয়ে পূর্ণিমা মণ্ডলের বাড়ি ভাঙচুর করার সময় হাতে লাঠি নিয়ে এভাবেই হুঙ্কার ছাড়েন সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান।

শুক্রবার সকালে সাংবাদিকরা বাঁকাল খেয়াঘাট এলাকার জেলেপাড়ায় গেলে পূর্ণিমা মণ্ডল, কৃষ্ণা বিশ্বাস, শ্যামলী বিশ্বাসসহ কয়েকজন নারী এভাবেই বৃহষ্পতিবার ঘরে সন্ধ্যা জালার পর মান্নানের নেতৃত্বে তাদের পাড়ার সশস্ত্র হামলার বর্ণনা দিতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তারা জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এখানে বসবাস করে আসছেন। ভোট দেন নৌকায়। জামায়াত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালিন তাদের উপর এত অত্যাচার হয়নি।

তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার সানাউল্লাহ গাজীর ছেলে মুজিবর পেশকার পুলিন মাখালের কাছ থেকে ১৫ শতক জমি পাঁচ লাখ টাকায় মৌখিকভাবে কিনেছেন দাবি করে তার ছেলে শুভ,স্থানীয় রমিজ ড্রাইভার, তার ছেলে আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন চলতি বছরের ৮ জুন রাতে তাদের পাড়ায় এসে রাতের মধ্যে হিন্দুদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। তা না হলে যুবলীগ নেতা মান্নানের সহায়তায় তাদেরকে দেশছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে ৯ জুন সকালে ওইসব হুমকিদাতাসহ কয়েকজন সুকুমার বিশ্বাসসহ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বাধা দেওয়ায় জয়দেব মাখাল, সহাদেব মাখাল, বিশ্বজিৎ মাখাল, শ্যামলী বিশ্বাস ও সরজিত কাজীকে পিটিয়ে জখম করে। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সুকুমার বিশ্বাস গত ৯ জুন বাদি হয়ে মুজিবর ড্রাইভারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দিলে ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান মামলা না নিয়ে মীমাংসার নামে নানাভাবে কালক্ষেপন করেন।

আসামীপক্ষ যুবলীগ নেতা মান্নানের কাছের লোক বিধায় দেড় মাসের পুলিশ কোন মামলা নেয়নি। এমনকি কোন শালিসি বৈঠক ও করেননি। গতবারে পুলিশ মামলা নিলে ও আসামীদের গ্রেপ্তার করলে বৃহষ্পতিবার মান্নান ও মুজিবর ড্রাইভাররা নতুন করে হামলা করার সাহস পেতো না। বর্তমানে তাদের পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

পূর্ণিমা মণ্ডল আরো বলেন, যুবলীগ নেতা মান্নান নিজে উপস্থিত থেকে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে যার ভিডিও ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন অথচ সাংবাাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে পূর্ণিমা বলেন বৃহষ্পতিবার হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর তারা সড়ক অবরোধ করলে মুজিবর ও তার ছেলেকে পুলিশ আটক করলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় ছেড়ে দিয়ে শুক্রবার সকালে থানায় আলোচনায় বসার কথা বলেন। অথচ শুক্রবার হামলাকারিপক্ষ থানায় আসেনি।

বৃহস্পতিবার রাতে নিরঞ্জন মাখাল বাদি হয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানসহ পাঁচজনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০জনকে আসামী করে এজাহার দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। নিজের মুখে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বাকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ায় মুজিবরের কোন শর্ত নেই বললেও অজ্ঞাত কারণে রাতে মামলা নেবেন বলে জানান। এটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কৌশল বলে অভিযোগ করেন পূুর্ণিমা। তবে রাতের মধ্যে মামলা রেকর্ড করে আসামী মান্নানসহ অন্যদের গ্রেপ্তার না করলে আবারো সড়ক অবরোধসহ বড় ধরণের কর্মসুচি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

তবে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নান বৃহষ্পতিবার রাতেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি এ ধরণের হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

সাতক্ষীরা সদও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি উভয়পক্ষকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য শুক্রবার সকাল ১০ টায় থানার গোলঘরে উভয়পক্ষকে ডেকেছিলেন। কিন্তু মুজিবর ড্রাইভার পক্ষ আসেনি।

আইনজীবীদের সাথে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে মুজিবরের ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে কোন শর্ত নেই। ভাঙচুর, লুটপাট ও মারপিটের ঘটনায় নিরঞ্জন মাখাল বাদি হয়ে যে এজাহার দায়ের করেছেন তা রাতেই রেকর্ড করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বাঁকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ায় জমি না থাকা পুলিন মাখালকে পাঁচ লাখ টাকা মৌখিকভাবে দিয়ে ১৫ বছর পর ওই জমি গায়ের জোরে জবরদখল করতে যেয়ে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বৃহষ।পতিবার সন্ধ্যার পর নিরঞ্জন মাখালসহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে নিরঞ্জন মাখাল, তার স্ত্রী অহল্যা মাখাল, সহাদেব মাখাল ও বলরাম মাখালকে পিটিয়ে জখম করা হয়। প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মান্নান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদেও গ্রেপ্তারের দাবিতে সাতক্ষীরা- কালিগঞ্জ সড়কে ঝাঁটা মিছিল করে ও অবরোধ করে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২০)