জামালপুর প্রতিনিধি : অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ঈদ উপহার বিতরণ ভেস্তে গেল। ঈদের আগে বিতরণ ভেস্তে যাওয়ায় এ উপহার সামগ্রী থেকে বঞ্চিত হলেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত দরিদ্ররা। স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিশেষ কিছু লোকজনের নাম তালিকাভুক্ত করার চাপ দেওয়ায় ভেস্তে গেছে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রস্তুতকৃত তালিকা।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে। বন্যাকবলিত ইউনিয়নগুলো হলো কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলি, সাপধরি, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর ও পার্থশী।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে বলা হয়, প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ জন অতিদরিদ্রর মাঝে ওই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার কথা। প্রতিজনের ত্রাণ সামগ্রীতে থাকার কথা চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ অন্তত আড়াই হাজার টাকা
মূল্যের জিনিস। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ত্রাণসামগ্রী সঠিকভাবে বিতরণের জন্য সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে দেশের প্রথমবারের মতো দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সাংবাদিকদের।

ইসলামপুর প্রেসক্লাব সূত্রে জানা গেছে, অতীতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে নানাবিধ অভিযোগ থাকায় বন্যাকবলিত এলাকায় এবার সঠিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণসামগ্রী ঈদের আগে বিতরণ করতে একাধিক গ্রুপে সাংবাদিকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করেন। কিন্তু প্রভাবশালী
শক্তির কালোথাবায় তা ভেস্তে গেছে। ফলে ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হতে হলো বানভাসী অতিদরিদ্রদের।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কখনো নৌকাযোগে, কখনো পানিতে ভিজে, আবার কখনো কাঁদায় হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকরা সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করায় অনেকটাই সঠিকভাবে ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার আশায় স্বস্তিবোধ করেছিলেন অতিদরিদ্ররা।

জানা গেছে, শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে উপজেলার চিনাডুলী ও সদর ইউনিয়নে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু এতে বাঁধসাধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এক 'অদৃশ্য শক্তির কালোথাবা'। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ নিয়ে
বিপাকে পড়েন খোদ প্রকল্প কর্মকর্তা! ত্রাণ বিতরণ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হন সাংবাদিকরা।

অভিযোগ রয়েছে, ত্রাণ বিতরণ তালিকায় হঠাৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশেষ কিছু লোকজনের নাম বৃদ্ধি করতে বলায় সুষ্ঠু বিতরণের স্বার্থে সাংবাদিকদের তরফ থেকে আপত্তি তোলা হয়।

ইসলামপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খাদেমুল হক বাবুল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ জানান, 'প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত উপহার ত্রাণসামগ্রীগুলো সঠিকভাবে বিতরণের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের দায়িত্ব দেয়ার পর
থেকে নৌকাযোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা অতিদরিদ্র সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা করি। ত্রাণ বিতরণের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সুবিধাভোগীদের মাঝে ত্রাণের কার্ডও বিতরণ করা হয়। কিন্ত হঠাৎ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে আমাদের জানানো হয় আপত্তিকর কথা। অযৌক্তিক কিছু দাবি করা হয়। পরে আমরা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়েছি।’

মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ওসমান হারুনী জানান, 'আমরা সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করলেও অদৃশ্য শক্তির থাবায় শেষ পর্যন্ত ঈদের আগে দরিদ্রদের মাঝে ওই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা গেলো না।'

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণসামগ্রীগুলো সঠিকভাবে বিতরণের লক্ষ্যে
সাংবাদিকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এখন কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ঈদের আগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা গেলো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানতে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

(আরআর/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২০)