নিউজ ডেস্ক : ইসলামী ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটি উৎসবের মধ্যে ইদুল আযহা অন্যতম। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে প্রতি বছর মুসলিম বিশ্ব ইদুল আযহা পালন করে। মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পশু কোরবানি দেয় এই ইদে। যে কারণে এই ইদ কোরবানির ইদ নামেও পরিচিত। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,"আল্লাহর কাছে(কোরবানির পশুর) রক্ত-মাংস কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের সদিচ্ছা-তাকওয়া(সূরা-হাজ্জ-৩৭)।

এবছরের কোরবানির ইদটা অন্যবছরের থেকে আলাদা।বিশ্বে চলছে করোনা মহামারী, দেশে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মানুষ করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন এবং ২.৫-৩.৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন।অসংখ্য মানুষ করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে চাকরি হারানো, করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনাতে আক্রান্ত হয়ে যে মারা যাওয়া মানুষের পরিবারের সদস্যদের কাছে এবারের ইদ বিবর্ণ। করোনার প্রভাব পড়েছে হজেও, মাত্র এক হাজারের মতো অল্প সংখ্যক মানুষ এ'বছর হজ পালন করতে পেরেছেন। সৌদিআরব এবং সৌদিআরবে বসবাসরত বিদেশি মুসলমানরা এসুযোগ পেয়েছেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হজ পালন করে দেখা গিয়েছে।

করোনার কারণে এবার হজ আদায়ের সুযোগ পায় নি সৌদিআরব ব্যতিত অন্যদেশের মুসলমানগণ। এদিকে ইদুল ফিতরে দেশের যানবাহন চলাচলের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলে এই ইদে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে নাড়ির টানে পরিবার-পরিজনদের সাথে ইদ করতে কর্মস্থান ছেড়ে বিশেষ করে ঢাকা শহর ছেড়ে লাখো মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। সড়ক, রেল এবং নৌ'পথে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি সেখানে মানা হচ্ছে না বললেই চলে। তবে এসকল মানুষ একধরনের উদ্বেগ, করোনা-ভয় নিয়েই বাড়িতে ফিরছেন। ইদ উপলক্ষে সারাদেশে এভাবে অবাধ বিচরণের ফলে ইদ পরবর্তী সময়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে চরমে।

করোনা ভাইরাসের এই মহামরীতে দেশের মানুষ যখন বিপদগ্রস্ত, তখনই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে বন্যা। দেশের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, মানিকগঞ্জসহ বেশ কিছু জেলাতে বন্যা দেখা গিয়েছে। লাখো লাখো মানুষ ঘরবন্দী, গৃহহীন হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। এসব মানুষের কাছেও এবাবের ইদ বিবর্ণ। ইদের খুশি এসকল বানভাসী মানুষের মুখে দেখা যাবে না।

প্রতিবছর কোরবানির ইদে কোরবানির পশু এবং চামড়া বিক্রিকে কেন্দ্র করে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি হয় সেটাও এবার কিছুটা স্থবির। করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার জন্য কোরবানীর পশুর দাম অন্যবারের তুলনায় এবার অনেক কম। ফলে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন খামারী ও প্রান্তিক পশু-পালনকারীরা। পশুর নায্য মূল্য হতে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অনেকসময় লস দিয়ে পশু বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার করোনা এবং বন্যার কারণে কোরবানী দেওয়ার হারও কমেছে এবার। এমতোবস্থায় প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও চামড়ার মূল্য নিয়ে আশাবাদী হাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ইদুল ফিতরের মতো এই ইদেও সরকার ইদগাহে কিংবা খোলা মাঠে নামাজ আদায়ে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে ইদের নামাজ আদায় করতে বলেছেন। চিরচারিত কোলাকোলি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

সবমিলিয়ে করোনা এবং বন্যার কারণে দেশবাসী এবার অন্য বছরের ন্যায় উৎসব মুখর পরিবেশে ইদুল আযহা পালন করতে পারবে না। তবুও আমরা আশাবাদী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরিস্থিতি অনুধাবণ করে দেশের উৎসব মুখর পরিবেশে ইদ উল আযহা পালনের চেষ্টা করবে। দেশবাসী প্রতি ইদের শুভেচ্ছা রইলো।ইদ মোবারক। কোরবানিতে গরিবের হক আদায় করুন,বর্জ্য অপসারণ করে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলের সঙ্গে ইদের খুশি ভাগাভাগি করে নিন।

লেখক : নুরুজ্জামান শুভ
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, Inspire Care&Cultivate Human AID-ICCHA(ইচ্ছা), সামাজিক সংগঠন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।