মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : নিয়ম বর্হিভুত বে-আইনীভাবে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় বন্ধ হওয়ার পর অবশেষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই চা বাগান দু’একদিনের মধ্যে চালু হচ্ছে। 

সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৪ টার দিকে ধলই চাবাগানের অচলাবস্থা নিরসনে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এর উপস্থিতিতে অনুষ্টিত বৈঠকে শীঘ্রই বাগান চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্তে বিতর্কিত ব্যবস্থ্যাপককে বাহিরে রেখে ঘোষিত বে-আইনী নোটিশ প্রত্যাহার করে মঙ্গলবার থেকে ধলই চা বাগান চালুর প্রস্তাব চাইলে কর্তৃপক্ষ বাগান চালু করতে একদিন সময় নেয়। পরবর্তী বৈঠকে দীর্ঘ ২১ দিনের চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ধলই চা বাগানের পক্ষে আকস্মিকভাবে নোটিশ দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পরদিন ২৮ জুলাই চা শ্রমিক মনু-ধলাই ভ্যালীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরদিন ২৯ জুলাই সমঝোতা বৈঠক হয়।

এ বৈঠকে ধলই চা বাগানের শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি প্রদানের সিদ্ধান্ত হলেও চা বাগান খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এর পর ৪ আগষ্ট আবারও কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বৈঠক বসেন। ওই বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে সে দিন সন্ধ্যায় ধলই চা বাগান থেকে আগত সহ্রসাধিক নারী-পুরুষ চা শ্রমিকরা উপজেলা প্রশাসন এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

দীর্ঘ ২১ দিন ধরে ধলই চা বাগান বন্ধ থাকায় কোন প্রকার মজুরি ও রেশন না পেয়ে ধলই চা বাগানের এক হাজার শ্রমিক পরিবার মানবেতন জীবন যাপন করছিলেন। এ প্রেক্ষিতে সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৪টায় মৌলভীবাজার- ৪ আসনের সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. এম এ শহীদ মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদকে সাথে নিয়ে সরেজমিন ধলই চা বাগানে গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বৈঠক করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান,ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, শ্রম অধিদপ্তরের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের শ্রম কর্মকর্তা মোশাহিদ বক্স চৌধুরী, ধলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ খানসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে চা শ্রমিকদের কিছু অভিযোগ ও ২১ দিনের মানবেতর জীবন-যাপনের কথা শুনে সাংসদ নির্দেশনা দিয়েছেন আজ সোমবার ২৭ জুলাই ঘোষিত নোটিশ প্রত্যাহার করে মঙ্গলবার থেকে ধলই চা বাগান খুলে দিতে হবে। আর বিতর্কিত ব্যবস্থ্যাপককে ধলই চা বাগান কোম্পানীর সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হবে। চা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে ২১ দিন ধলই চা বাগান বন্ধ থাকায় শুধু চা শ্রমিকদের ক্ষতি নয় চা বাগানের উৎপাদনেরও বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে বলে সাংসদ তুলে ধরেন। এ নির্দেশনা তাৎক্ষনিকভাবে ধলই চা বাগান কোম্পানীর প্রতিনিধি মেনে নেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, অবশেষে সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২১ দিন পর ধলই চা বাগান খুলবে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, মঙ্গলবার থেকে চা বাগান চালু হবে এমনটা বলা যাচ্ছে না তবে দু’একদিনের মধ্যে ধলই চাবাগান চালু হচ্ছে এটা নিশ্চিত।

(একে/এসপি/আগস্ট ১৭, ২০২০)