মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক গণ পরিষদ সদস্য রনাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লা...রাজেউন)।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত আড়াইটার দিকে তিনি রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মৃত্যুবরণ করেন । মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সড়ক পথে লাশ এসে পৌঁছে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুজারাই গ্রামে বাড়িতে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় শহরের টাউন ঈদগাহে আজিজুর রহমানের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে পরবর্তীতে দাফন কাজ সম্পন্ন হবে।

গত ৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান এর শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে বিমান বাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

নাট্যাঙ্গণ থেকে রাজনীতি, সবমিলিয়ে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আজিজুর রহমান ছিলেন সাবেক গণপরিষদ সদস্য, দুই বারের সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ, বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মহান স্বাধীনতা পদকেও ভূষিত হন ৭১ এর এই যোদ্ধা।

সর্বশেষ মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি মৌলভীবাজার ইউনিট এর চেয়ারম্যান সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

আজিজুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের অধিনে মুক্তিযুদ্ধ কালীন মৌলভীবাজার জেলা রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ছিলেন।

আজিজুর রহমান ১৯৪৩ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুজারাই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয় তিনি একাধিক বার পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পাক হানাদারদের হাতে নির্যাতনের শিকার একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাও।

আজিজুর রহমান ১৯৫৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬২ সালে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে আইকম পাশ করেন এবং হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ থেকে বি-কম পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম কম পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সংসদে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী ও কনিষ্ট এমপি ছিলেন। এরপর ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে টানা ২ বার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। একবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও একবার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি আজন্ম প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক অহিংস রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক মনা একজন মানুষ ছিলেন।

(একে/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০২০)