মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : চা শ্রমিকদের দাবীর মুখে অবশেষে বাগান ছাড়লেন কমলগঞ্জের দলই চা বাগানের বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের তোপের মুখে দলই চা বাগানের বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বাগান ছাড়েন। এ সময় উত্তেজিত চা শ্রমিকরা বাগানের এজিএম খালেদ খাঁনের গাড়ি ভাংচুর করেন। 

বুধবার (১৯ আগষ্ট) দলই চাবাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বেলা বাড়ার সাথে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং বাগানের এজিএম খালেদ খান বাগানে ছুটে যান। এ সময় চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন তারা। কিন্তু চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপক অপসারণের দাবীতে অনড় থাকলে শ্রমিকদের তোপের মুখে দলই চা বাগান ছাড়তে বাধ্য হন বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম। এ সময় উত্তেজিত চা শ্রমিকরা এজিএম খালেদ খানের গাড়ি ভাংচুর করেন। পরে পুলিশ পাহারায় বুধবার দুপুরে ব্যবস্থাপক সহ এজিএম বাগান ত্যাগ করার পর বাগানের পরিস্থিতি শান্ত হয়।

মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকরা আজ সকাল ৯টার দিকে কাজে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তারা কাজে যোগ না দিয়ে বাগানে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে। এসময় ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও এজিএম খালেদ খাঁনের গাড়ি ভাংচুর করে এবং খালেদ খাঁনকে লাঞ্চিতও করে। তিনি বলেন,বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

তবে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এর সাথে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিকে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দ্বায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিতে।

গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় আকষ্মিক ঘোষণায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দলই চা বাগান বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। বেআইনীভাবে বন্ধ করে দেওয়া দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে পরদিন ২৮ জুলাই সকাল থেকে চা শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

এ সময় চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপকের অপসারণের দাবী জানান। তাদের এ দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে কমলগঞ্জের অন্য ২২টি চা বাগানসহ দলই ভ্যালীর বিভিন্ন চা বাগানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নসহ চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন চা বাগান খুলে দেওয়ার দাবীতে আন্দোলনে নামে। এক পর্ষায়ে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

বৈঠকে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। কয়েক দফা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাগান খুলার কোনো সিদ্ধান্তে পৌছা না গেলেও চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপির উপস্থিতিতে দলই চা বাগানে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) সহ প্রশাসনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি,দলই চা বাগানের মালিক পক্ষ এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বেআইনিভাবে গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় দেওয়া ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার (১৯ আগষ্ট) থেকে দলই চা বাগান খুলে দেওয়া হবে। চা শ্রমিকদের দাবির মুখে বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে অপসারণ করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। চা শ্রমিকরা জানান, বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকেরা মেনে নেন।

কিন্তু বৈঠক শেষে ওইদিন রাতের আঁধারে কোম্পানি আমিনুল ইসলামকে চাতুরীপনা করে দলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করায়। মঙ্গলবার সকালে বাগান বন্ধের ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে চা বাগান খোলার ঘোষণা দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিতর্কিত ব্যবস্থাপককে চা বাগানে প্রবেশ করিয়ে চা শ্রমিকদের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। মঙ্গলবার দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যে বুধবার সকাল ৮টা থেকে দলই চা বাগানের প্রধান অফিসের সামনে অবস্থান নেয় চা শ্রমিকরা।

(একে/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২০)