অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : বলেশ্বর ও বিষখালি নদীতে পানি বৃদ্ধির প্রভাবে উপকূলীয় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা ভাঙ্গন এলাকার বেরিবাঁধের ৫টি পয়েন্ট ভেঙ্গে ১০ গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহি অফিসার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। আগে থেকেই ভাঙতে ছিল ওই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বেরিবাদটি। যেটি বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাপক আকারে ভাঙ্গন শুরু হয়। বেলা এগারোটার দিকে এই ভাঙ্গন দেখে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন পাথরঘাটা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি জন প্রতিনিধিসহ অনেকে।

বাঁশ চাটাই সহ স্থানীয় উপায়ে তাৎক্ষণিক ধ্বসে যাওয়া বেরিবাধ এলাকাটি মেরামত করা হলেও শুক্রবার ভোর থেকে সেটি আবার ভেসে যেতে শুরু করে।

বেরি বাধ ভেঙে গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে মাছের ঘের সহ ফসলি জমি। এছাড়াও প্রবল বর্ষণ ও অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাব জেলার তিনটি প্রধান নদী বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে ,স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিষখালি নদী সংলগ্ন আশেপাশের এলাক ঘুরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সিডরের তাণ্ডবে ভেঙ্গে যাওয়া পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মার এলাকার বেরিবাঁধ টি বার বার ‌ নামেমাত্র সংস্থার করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। সিডরের পর পদ্মা রুহিতা এলাকার প্রায় ২ কিলোমিটার ওয়াপদার বেরিবাধ নদীগর্ভে বিলীন হয় গেছে। নামেমাত্র বেরিবাধ গুলোর কাজ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঠিকই অর্থ তুলে নিয় যায়। আর এলাকায় বসবাসকারী প্রায় হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ আর লাঘব হয় না।

ভুক্তভোগীরা জানান, কাজের অনিয়মগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে সকলের মুখ বন্ধ রাখে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার প্রভাবে এ জেলায় ৪৫০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, আবাদি জমি, মৌসুমী রবি শস্য, আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে ।

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমনের সাথে যোগাযোগ করে পধ্মা ভাঙ্গনের মেরামতের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী।

এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো.হুমায়ুন কবির, পাথরঘাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহি অফিসার হুমায়ুন কবির ভোরের কাগজকে জানান, বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় আমরা উপস্থিত হয়ে ৫০ জন শ্রমিক নিয়োগ দেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনায় বাশ চাটাই ইত্যাদি দিয়ে স্থানীয় উপায়ে তাৎক্ষণিক মেরামত করি।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ২৫০ পরিবারের মধ্যে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করি।

(এটি/এসপি/আগস্ট ২০, ২০২০)