রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরাু : রবিবার বিকেল থেকে রাতভর সাতক্ষীরায় নতুন করে কয়েক দফায় মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের তীরে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে উঁচু জায়গায় অবস্থান করছিলেন তাদের কষ্টের শেষ নেই। এ অবস্থা চলমান থাকলে তাদেরকে অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ও একই গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী দীর্ঘ তিন মাসেও সুভদ্রকাটি ও শ্রীপুরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ভালভাবে মেরামত না করায় লঞ্চঘাট এালাকায় কয়েক দফায় ভেঙেছে। পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। এ ছাড়া সুভদ্রকাটিতে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় বাড়িতে জোয়ার ভাটা খেলে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের।

গত বৃহষ্পতিবারে অমাবস্যার জোয়ারে ও অতি বৃষ্টিতে আবারো শ্রীপুরের পার্শ্ববর্তী রিংবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। খাঁটের নীচে পানি, সাপ ও কীট পতঙ্গের ভয় থাকলে ও খাটের উপরে রাত কাটাতে হয়। ভাটায় কিছুটা পানি কমলেও জোয়ারে তা আবারো বেড়ে যায়। এরপরও রোববার বিকেলে ও রাতে কয়েক দফায় মুসল ধারায় বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে পানি বেড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও গত ৫ দিনেও মেলেনি কোন সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা। কাজ নেই, খাবার নেই ছেলেপুলেদের নিয়ে দিন কাটবে কি করে। ত্রাণ যা আসবে তা চেয়ারম্যান মেম্বরদের গোডাউন ভরার পর তো পানিবন্দিরা পাবে। সে তো অনেক দূর।

সুভদ্রকাটি গ্রামের সোহারাব হোসেন জানান, তালতলা বাজার থেকে সাতক্ষীরা গামি মূল সড়কের কল্যাণপুর নামক স্থানে ১০০ ফুটেরও বেশি ভেঙে গেছে। সেখান দিয়ে প্রবল জোরে জেয়ারের পানি ঢুকছে। ভাটায় বাঁধার চেষ্টা করলেও জোয়ারে আবারো ভেঙে যাচ্ছে। অসুস্থ রোগী আশাশুনিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে নৌকায় করে। এতে মৃত্যুঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া এ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটের অভিযোগ করেন তিনি। পানি বন্দি হয়ে গরু ছাগল নিয়ে বিপদে রয়েছেন উল্লেখ করে আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি গ্রামের নুরুল আমিন বলেন, এ রকম পানি জন্মের পর থেকে দেখেননি।

শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ির সিরাজুল গাইন, বাকের আলী গাইন, নেববুনিয়া গ্রামের রোমেছা খাতুন জানান, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়ার মধ্যেই তাদের বসবাস। ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসকে প্রতি বছরে এক দু’বার তাদের মোকাবেলা করতে হয়। গত বৃহষ্পতিবারের উন্মত জেয়ারের পানি দেখে তাদের বাড়ি ছাড়া ছাড়া আর আর উপায় দেখছেন না।

সাতক্ষীরা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাসেত বলেন, আশাশুনি ও শ্যামনগরের ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি মানুষের জন্য ইতি মধ্যে দেড় লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টণ চাল দেওয়া হয়েছে। ৩৩০ মেট্রিক টল চাল ও ১০ লাখ টাকা চেয়ে ঢাকা অফিসে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে আগামী নভেম্বরের আগে ওইসব বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে জানান সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (২) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু শেখর সরকার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্যোগ পরবর্তীতে তিনি কয়েকবার শ্যামনগর ও আশাশুনির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান অনুযায়ি সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহষ্পতিবার থেকে অমাবস্যার জোয়ারে ও অতি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার উপকুলবর্তী কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর কয়েকটি রিং বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান সড়কের পাকা রাস্তার উপর দিয়ে প্রবল বেগে পানির স্রোত বইতে শুরু করে। পাানিবন্দি হয়ে পড়ে তিনটি ইউনিয়নসহ প্রায় ৫০টি গ্রাম। পানিবন্ধি হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নেয়।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২০)