মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী আলোচিত দলই চাবাগানের অচলাবস্থা ও সঙ্কট নিরসনে আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা দু’দিনের জন্য তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন বলে জানা গেছে। 

সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক, সাংবাদিক সাজিদুর রহমান সাজু ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আজাদুর রহমান এর মধ্যস্থতায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের কর্মসূচি দু’দিনের জন্য স্থগিত করেন।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (২৫ আগষ্ট) বিকেল ৩টার দিকে দলই চাবাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকদের মধ্যেকার সঙ্কট নিরসনে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী।

তিনি বলেন, আমরা চা শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে আন্দোলন এবং আমাদের গ্রহীত কর্মসূচি প্রত্যাহারে ৪টি শর্ত দিয়েছি । শর্তগুলো হলো, চা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, দ্রুত চাবাগান খুলে দেয়া, বিতর্কিক ব্যবস্থাপক বাগানে প্রবেশ না করা এবং চা শ্রমিকদের জন্য বন্ধকালীন মজুরী প্রদান করা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চা শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে ৪টি শর্ত তুলে ধরা হলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠকে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিষ্ফল বৈঠক শেষ হয়েছে। কোন সিদ্ধান্ত না হলেও বৈঠকে সঙ্কট নিরসনে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে দলই চাবাগানের পক্ষ থেকে এজিএম এবং সহকারী ব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল ও শ্রম অধিদপ্তরের উপ-সহাকরী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম, চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী , বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি,মনু-দলাই ভ্যালীর সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা।

শ্রম অধিদপ্তরের উপ-সহাকরী পরিচালক নাহিদুল ইসলাম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সুন্দর পরিবেশে খোলা মন নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। আগামীকাল দুপুর ২টার দিকে আবারো এই বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, উভয় পক্ষই চারটা করে শর্ত দিয়েছেন, আমরাও অত্যান্ত কৌশলে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আশা করি পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।

এর আগে গত সোমবার (২৪ আগস্ট) দলই চা বাগানের শ্রমিকসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপর বাগান কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মিথ্যা মামলার প্রতিবাদের ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার দলই চা বাগান থেকে পায়ে হেটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ওই সময় কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক জানিয়েছিলেন চা শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছে, তবে তাদের কোন প্রতিনিধির সাথে আলোচনা হয়নি।

২২ আগষ্ট শনিবার রাতে দলই চা বাগানের এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদী হয়ে মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন কমলগঞ্জ থানায়। মামলা এজিএম এর গাড়ি গতিরোধ করে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়।

(একে/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২০)