ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : আসন্ন উপনির্বাচনে পাবনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে নৌকার প্রার্থী করায় সর্বস্তরে স্বস্তি, উল্লাস ও আনন্দের বন্যা বইছে। রবিবার সন্ধ্যা ছযটার পর এই সিদ্ধান্তের খবর ঈশ্বরদী ও আটঘোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে শহরের আকবরের মোড়ে বিশ্বাসের বাড়িতে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামতে শুরু হয়। ঢল সামাল দিতে এবং সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ সেখ নাসীর উদ্দিন পুলিশ মোতায়েন করেন।

এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিল। মনোনয়ন নিয়ে গত কযেকদিন শহরে টান টান উত্তেজনা চলছিল। প্রত্যাশিদের সমর্থকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে বলে মিষ্টিও খাওয়া-দাওয়া করেছে। প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করলেও সমর্থকরা মাঠ চাঙ্গা রাখতে তাদের পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত বলে ছোট খাট শোডাউনও করেন। এই পর্যায়ে ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগ বহুধা বিভক্ত বলে দৃশ্যমান হয়। ব্যতিক্রম ছিলেন নুরুজ্জামান বিশ্বাস এবং তাঁর সমর্থকরা।

মনোনয়ন ঘোষণার পর সহিংসতা হতে পারে বলে আশংকা ছিল। যে কারণে রবিবার দুপুরের পর হতেই বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু নুরুজ্জামান বিশ্বাসের মনোনয়নের খবর আসার পর চিত্র বদলে যায়। সহিংসতার বদলে আনন্দের বণ্যায় উদ্বেলিত হয় আপামর জনতা। ঈশ্বরদীর আইন শৃংখলা বাহিনী, সুশিল সমাজসহ সর্বস্তরে স্বস্তি পরিলক্ষিত হয়।

জানা যায়, ঢাকায় মনোনয়ন বোর্ডের সভা চলাকালে প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য নূরুজ্জামান বিশ্বাস ঈশ্বরদীতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ছিলনা কোন উত্তেজনা বা টেনশন। ঘুম থেকে ওঠার পরও তিনি মনোনয়নের খবর জানার জন্য উদগ্রিব ছিলেন না। তাঁর একজন শুভাকাঙ্খি ফোনে খবর জানানোর পর তিনি উঠে ওজু করে নামায আদায় করতে যান। অথচ বিকেল ৪টা থেকে অন্যান্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকসহ অনেকেই উদগ্রিব ও উৎকন্ঠায় ছিলেন। কোন কোন প্রার্থীর সমর্থকরা মিষ্টির দোকানে খোঁজ নেয় পর্যাপ্ত মিষ্টি মজুদ আছে কিনা।

মনোনয়ন প্রত্যাশি ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ত্যাগী নেতা নূরুজ্জামান বিশ্বসকে মনোনয়ন দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগ সুশৃংখল হবে। ইনশাল্লাহ এই আসনে আমরা আবারো নৌকাকে বিজয়ী করবো।

পাঁচ শতাধিক মোটর সাইকেলে সহস্রাধিক সমর্থক নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাজির হন বিশ্বাসের বাড়িতে। তিনি বলেন, ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগ অভিভাবক শুণ্য হয়ে পড়েছিল। জননেত্রী যোগ্য ব্যক্তিকে অভিভাবক মনোনীত করায় ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের মানুষ আজ আনন্দের বণ্যায় ভেসে চলেছে।

সকালে মুক্তিযোদ্ধারা অভিনন্দন জানাতে এলে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল ও ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী, মহান মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই।

মনোনয়ন প্রত্যাশী পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ব্যারিষ্টার সৈয়দ আলী জিরু বলেন, আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাসের মতো একজন সুযোগ্য ও দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদকে নৌকার কান্ডারী মনোনীত করে আবারো প্রমাণ হলো যে, কোন সংকট বা সমস্যা সমাধানে সত্যই প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষনতা ও মানবতার পরিচয় দেন। ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাসের মতো অসম্প্রাদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর সৈনিক, জনবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন জননেতাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন উপহার দেয়ার জন্য।

শিল্প ও বনিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাচ্চু আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতোভয় সৈনিককে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা গর্বিত। তাঁর প্রতি আমাদের সকলের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ সেখ নাসীর উদ্দিন বলেন, দলের মনোনয়ন পাবার পর প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোর জন্য জনতার এমন ঢল আর কখনো দেখিনি। নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পর সাধারণত মানুষের ঢল নামে। এই ঢল প্রমাণ করেছে নূরুজ্জামান বিশ্বাস একজন জননন্দিত নেতা।

(এসকেকে/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২০)