খুলনা প্রতিনিধি : খুলনায় বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতিতে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ ও মামলার বেড়াজাল। শতাধিক মামলার ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে আছে খুলনা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। 

এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হয়ে আছে থানা, ওয়ার্ড ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে দলাদলি। এখানে স্বেচ্ছাসেবক দল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। থানা ও কলেজ কমিটি নিয়ে ছাত্রদলে চলছে বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় দলটির সামনের সারির নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। সবচেয়ে হতাশায় রয়েছে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনীতিতে। সেই আন্দোলনকে সফল করতে ইতোমধ্যে দল পুনর্গঠন কাজ শুরু করেছে বিএনপি। খুলনা মহানগরীতেও ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মিসভা করে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, খুলনায় বিএনপির আন্দোলনে বড় বাধা পুলিশ, মামলা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো।

বিএনপির মহানগর কমিটির একাধিক নেতা জানান, থানা কমিটির অনেক নেতাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মীরা এখন আর মিছিল-সমাবেশে আসেন না। অন্যদিকে যারা মিছিলের প্রথম সারিতে থাকেন তারা কোনো কমিটিতে নেই। একই অবস্থা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলে। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দায়িত্বে থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে নগরীর ৫টি থানায় বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সদর থানা সভাপতি আবদুল জলিল খান কালাম ও সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি আনোয়ারুল কাদির খোকন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এই দুই থানায় দল চালাচ্ছেন যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান অপু ও আসাদুজ্জামান মুরাদ। তাদের বিরুদ্ধে ওয়ার্ডের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে। খালিশপুর থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে রয়েছে চরম বিরাধ। নগরীর থানা কমিটিগুলোর বেশিরভাগ নেতাই দলীয় কর্মসূচিতে আসেন না।

অঙ্গ সংগঠনগুলোর অবস্থাও একই রকম। ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর নগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় চার বছর অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি সংগঠনটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি বলে জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। নতুন ৯টি ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থান করছে। নগরীর থানা ও কলেজগুলোতে ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই।

২০১০ সালের ২ জুন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল এটি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি বা সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম। গত ১০ বছরে নগর যুবদলের কোনো সম্মেলন হয়নি।

মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজিজুল হাসান দুলু বলেন, এক সংগঠনে ৪ বছর ধরে আহ্বায়ক পদে আমি থাকতে চাই না। অন্যদের সুযোগ দিতে এখন প্রয়োজন সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা। কিন্তু সংগঠন তা চাইছে না।

সূত্র আরো জানায়, খুলনায় নগর ও জেলা বিএনপিতেও রয়েছে দলাদলি। নগরীতে এমন কজন নেতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যারা বর্তমান ধারার সঙ্গে ছিলেন না। তারা এখন পদ-পদবি রক্ষায় ব্যস্ত। আন্দোলন তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়।

এদিকে দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় আন্দোলনের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা। নগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চল জানান, খুলনা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় থেকে শুরু করে মাঝারি পর্যায়ের প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা করা হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য গোটা বিশেক মামলা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে খুলনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় ৯০টি। তবে এসব সমস্যা আমলে নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, নির্বাহী কমিটির সভার পর আগস্ট মাসজুড়ে আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মিসভার মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করব। ইতোমধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা শুরু করা হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে যে ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন অঙ্গ সংগঠন, ওয়ার্ড ও থানা কমিটিতে সেই লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সম্মেলন করা হবে। ছাত্রদল ও যুবদলের মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করা এবং যারা একেবারে নিষ্ক্রিয় তাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা তিনি বলেননি। এছাড়া তিনি আরও বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে নেতা-কর্মীদের দূরে সরে রাখার জন্য স্থানীয় পুলিশ তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা মানসিক চাপ রয়েছে। তবে কোনো চাপ বা সরকারি দমন-পীড়ন আসন্ন আন্দোলন থেকে খুলনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের পিছু হটাতে পারবে না।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১৬, ২০১৪)