বাগেরহাট প্রতিনিধি : ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবরে নদী-খালে মাছের প্রজনন মৌসুমে দু’মাসে নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ও কাঁকড়া আহণরে আজ থেকে নেমে পড়েছে জেলেরা। দু’মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে উপকূলের জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ট্রলার, নৌকা নিয়ে নেমে পড়েছে। 

প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে গত জুলাই ও আগস্ট মাস পর্যন্ত গোটা সুন্দরবন অভ্যন্তরের জেলেদের নদী ও খালে প্রবেশ ও সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ আহরন বন্ধ রাখে বন বিভাগ। আর এতে করে করোনাকালে চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছিল সুন্দরবন উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে পরিবার। এদিকে দু’মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতিতে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার-হাজার জেলে পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে।

সুন্দরবন বিভাগ ও জেলেদের সুত্রে জানাগেছে, ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে জলভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪.১ বর্গ কিলোমটিার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ এলাকা। এই বিশাল জলভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল রয়েছে। এসব খালে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মরাস্কা, ও ১ প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। তবে, এই ম্যানগ্রোভ জলাভুমির মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রসস্ত খালে সারা বছরই মাছ ও কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। আর বাকী অংশের নদী ও খাল বৈধ পাশ-মিটধারী জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া আহরন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ কওে থাকে। সুন্দরবনে মৎস্য আহরনের উপর উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্ভর। এদের বেশির ভাগ জেলেই বংশ পরম্পরায় সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা পিরোজপরু ও বরগুনাসহ সুন্দরবন লাগোয়া এলাকার বিপুল সংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠী সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ আহরন ও বিকিকিনির সাথে জড়িত।

সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানসের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সালে বন বিভাগ প্রতি বছর ১ জুলাই ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গোটা সুন্দরবনের সকল নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। মৎস্য আহরনের এ নিষেধাজ্ঞা গত সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়। তবে, সুন্দরবন বিভাগের অনুমতি ও পাশ-পারমিট সংগ্রহ করতে বিলম্বের কারনে আজ ভোর থেকে জেলেরা ফের মাছ ও কাঁকড়া আহরণ শুরু করেছে। এখন মাছ ও কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্টেশন সমূহে থেকে অনুমতি ও পাশ-পারমিট সংগ্রহ করতে জেলেদেও ভিড় বেড়েছে বলে বন বিভিাগ নিশ্চিত করেছে। তবে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত আকারে জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুম থাকায় নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলোরা বৈধ পাশ-পারমিট নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন খাল-নদীতে পুনরায় মাছ ও কাঁকড়া ধরতে শুরু করেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত আকারে জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলেদেও ছদ্মবেশে কেউ যাতে বিষ দিয়ে সুন্দরবনে মাছ শিকারসহ বেআইনী কর্মকান্ডে জড়িত না হয়, সে জন্য বন রক্ষীদেও টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেয়া াহয়েছে।

(এসএকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০)