স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।প্রধান আসামী আসাদুল ইসলাম স্বীকারোক্তি এবং পৃথক পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে, ইউএনও ওয়াহিদার খানম এবং তার বাবা ওমর আলী শেখকে পেটানো  হাতুড়ি ও পরিধানের লাল টিশার্ট। ছয়জনের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামকে শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটায় দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্তের কালিগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার ৪ নং ঘোড়াঘাট ইউপি’র সাগরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। তিনি জুতোর ব্যবসায়ী।

গ্রেপ্তাকৃত অন্য পাঁচজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম (৪২),মাসুদ রানা (৩৮), নবীরুল ইসলাম(৩৬), সান্টু দাশ (২৮)কে পৃথক পৃথক ভাবে শুক্রবার ভোর এবং দুপুরে ঘোড়াঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম (বর্তমানে বহিস্কৃত) ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা। ঘোড়াঘাট কাছিগাড়ি গ্রামের প্রক্তন পুলিশ সদস্য আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম এবং মাসুদ ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেবিপুর গ্রামের আদু মিয়ার ছেলে। নবীরুল ইসলাম একজন রং মিস্ত্রি। সান্টু দাশ পেশায় সুইপার। উপজেলাতেই সুইপারের কাজ করে। তাদের উভয়ের বাড়ি ইউএনওর বাসভবন সংলগ্ন।

এছাড়া বৃহস্পতিবার দিনাজপুর ডিবি গোয়েন্দা পুলিশ ইউএনও’র বাসভবনের নৈশপ্রহরী পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম দুজনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অন্য ৪ জনের ব্যাপারে জানাতে পারেননি। তিনি আসাদুল ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে দিনাজপুর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমাম আবু জাফর ইউএনওর বাড়িতে হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নৈশপ্রহরী পলাশকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্য একটি সূত্র মাসুদ রানা,নবীরুল এবং সান্টুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাব-১৩ এর এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কোনো ক্লু পাওয়া গেলে গণমাধ্যমের সামনে তাদের হাজির করা হবে।তবে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‍্যাব-১৩ এর আরেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রধান আসামী আসাদুলের স্বীকারোক্তি মতে, নবীরুল এবং সান্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে, ইউএনও ওয়াহিদার খানম এবং তার বাবা ওমর আলী শেখকে পেটানো হাতুড়ি ও পরিধানের লাল টিশার্ট।

এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় তার ভাই ফরিদ শেখ ঘোড়াঘাট থানায় গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি মামলা করেছেন। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ নেই বলে জানান ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘোড়াঘাট ইউএনওর বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলায় অংশ নেয় দু’জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মুখোশ ও অন্যজন পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরা। যাতে তাদের চেনা না যায়। পাতলা হালকা গরনের দু'জন রাতে তারা এক এক করে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ঘটনার পর একই সঙ্গে বের হয়ে যায়। সিসি ফুটেছে হাঁটার গতি দেখে আসাদুল এবং জাহাঙ্গীরকে অনুসরণ করা হয়। পরে তাদের করা হয় গ্রেফতার। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন, হামলায় আহত ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ। দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়ে তিনিও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ওমর আলী জানিয়েছেন, বাসায় ঢুকে হামলাকারীরা বারবার ওয়াহিদা খানমের কাছে আলমারির চাবি চেয়েছে। চাবি না দিলে তার চার বছরের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় একজন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হামলার ঘটনা তুলে ধরেন ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ।

কারো সাথে কন্ট্রাক এর মাধ্যমে মুলত কোন প্র‍যোজনীয় কাগজ-নথিপত্র গায়ের করার উদ্দেশ্যেই এই হামলা বলে ধারণা করছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টায় সরকারি বাসভবনে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন ঘোড়াঘাট থানার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও তার বাবা চিকিৎসাধীন আছেন রংপুরে।

বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াহিদা খানমের আড়াই ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর রাতেই জ্ঞান ফিরেছে। বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে ইউএনও ওয়াহিদা খানম।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০)