রাজন্য রুহানি, জামালপুর : যমুনা সার কারখানায় বিসিআইসির আমদানিকৃত কয়েক শ মেট্রিক টন জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার রিপ্যাকিং করে ডিলাদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ডিলাররা। জমাট বাঁধা এসব সার ট্রাক্টর দিয়ে পিষে এবং হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রিপ্যাকিং করে ডিলাদের চাপিয়ে দেয়ায় লোকসানসহ ফসলেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। তবে আমদানিকৃত ইউরিয়া সারে গুণগতমান সঠিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদীপ মজুমদার।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ভয়াবহ এক অভিকান্ডে যমুনার সার কারখানার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পুড়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এক বছরেরও অধিক সময় কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় মজুদ সংকটে পড়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ। জামালপুর, শেরপুর ও টাঙ্গাইল ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার কৃষকদের সার সরবরাহের লক্ষ্যে বিসিআইসির আমদানিকৃত সার যমুনা সার কারখানায় মজুদ করা হয়। পরে এখান থেকে কারখানার কমান্ড এরিয়ার ১৯ জেলার ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

কারখানার একাধিক সূত্র ও ডিলাররা জানিয়েছে, আমদানি করা বিপুল পরিমাণ এই সার রাখার জন্য বাফার গোডাউন না থাকায় এক বছরেরও অধিক সময় যমুনা সার কারখানার ভিতরে এবং বাইরে খোলা আকাশের নীচে রাখা হয়। দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় এসব সার রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে জমাট বেঁধে গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এই বিপুল পরিমাণ সার জমাট বেঁধে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন করাখানা কর্তৃপক্ষ। আর দায় এড়াতে জমাট বাঁধা সার ট্রাক্টর দিয়ে পিষে এবং হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রিপ্যাকিং করে ডিলারদের কাছে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ডিলারদের অভিযোগ, পাথরের ন্যায় শক্ত জমাট বাঁধা আমদানিকৃত এই ইউরিয়া সার রিপ্যাকিংকারী ঠিকাদার সঠিকভাবে রিফাইন না করে ছোট ছোট টুকরোসহ রিপ্যাকিং করে কারখানা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ ডিলারদের যমুনার উৎপাদিত ১০ মেট্রিক টন সারের সাথে ২ মেট্রিক টন জমাট বাঁধা রিপ্যাকিং করা নি¤œমানের সার নিতে বাধ্য করেন। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। শুধু তাই নয়, এই ইউরিয়া সার যেসব টুকরো জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তা ফসলের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, বিসিআইসি কর্তৃক আমদানিকৃত যমুনা সার কারখানায় যে সার রক্ষিত রয়েছে, তার কিছুটা জমাট বাঁধলেও গুণগত মান ভাল রয়েছে। যদি কোনো বস্তায় জমাট বাঁধা ছোট ছোট টুকরো থেকে থাকে তাহলে সেগুলো গুঁড়ো করে ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি। এই সার ব্যবহারে ফসলের কোনো ক্ষতির সম্ভবনা নেই। কিন্তু জমাট বাঁধা সার ফসলে ব্যবহার করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এবং উত্তরবঙ্গের একাধিক সার ডিলার বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের আমদানিকৃত জমাট বাঁধা রিপ্যাকিং করা নিম্নমানের এসব সার সরবরাহ বন্ধ করা না হলে কারখানা থেকে সার উত্তোলন বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হবেন।।

ডিলাদের নি¤œমানের সার সরবরাহের অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদীপ মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমদানিকৃত যেসব সার ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে, তার গুণগতমান সঠিক রয়েছে। কিছু সার জমাট বেঁধে গেছে। তা রিপ্যাকিং করে ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সার ব্যবহারে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০)