শাহরিয়ার নোবেল, কুবি প্রতিনিধি : করোনাকালে আর দশটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই নীরব, নিভৃত পড়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কোথাও কোনো কৌতূহল নেই। তবে, এই নিস্তব্ধতার মাঝেই সরব ছাত্রলীগের রাজনীতি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেকদিন আগেই। তাই নতুন কমিটি কবে আসছে, নেতৃত্বে কারা আসবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন, পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।

গত ২০১৭ সালের ২৬ মে, ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কুবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিকে ১ বছরের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে একই বছরের ২২ নভেম্বর পুর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সে হিসেবে এই কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে সেই ২০১৮ সালেই। তবু ঘোষণা করা হয়নি নতুন কমিটি। ৩ বছরেও ফুরায়নি ১ বছরের কমিটি।

এদিকে করোনায় সব নীরব থাকলেও, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিয়ে আসা পদপ্রত্যাশীরা চুপচাপ বসে নেই। তারা কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং করোনাকালীন বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামনের কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন সে সম্পর্কে কোনো পূর্বানুমান করা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ইলিয়াস ভাই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। একে তো শিক্ষাজীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তিনি পদ পেয়েছেন, অন্যদিকে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি আসছেনা। ইলিয়াস ভাই ১ম ব্যাচের ছাত্র, ক্যাম্পাসে এখন ১৪ তম ব্যাচ চলে এসেছে। ফলে পদের অপেক্ষায় থাকা যোগ্য ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সংখ্যা অনেক। সংখ্যা যেহেতু বেশি তাই আগেই অনুমান সম্ভব না।’

তিনি বলতে না পারলেও নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য যারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অনেকের নামই আসছে আলোচনায়। সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। কারণ এই পদেই সবচেয়ে বেশি পদপ্রার্থী।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আলম দীপ্ত, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সহ-সভাপতি (১) নাজমুল হাসান পলাশের নাম আসছে সাধারণ সম্পাদক পদের আলোচনায়। তারা ছাড়াও আরও চার জন এই পদটির জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে তথ্য থাকলেও প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশল বলে প্রকাশ করতে চাননি।

বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াসের বিশ্বস্ত সহচর রাফিউল আলম দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের চলমান কমিটি খুব ভালভাবেই চলছে। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে তো নতুন কমিটি আসবেই। আমার কেন্দের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, নতুন কমিটিতে যেনো ত্যাগী ও সত্যিকারের ছাত্রলীগ এর জন্য যারা কাজ করেছে, সময় দিয়েছে তাদের মূল্যায়ন করা হয়।’

প্রায় একই সুরে কথা বলেন করোনাকালীন সময়ে নিজ এলাকায় বিভিন্ন মানবিক কাজ করে আলোচনায় থাকা নাজমুল হাসান পলাশ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগ কিংবা ছাত্রলীগ যেখানেই বলেন সত্যিকারের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভাব আছে। সুসময়ে অনেকেই এসে ভিড় করে। তাই আমার চাওয়া থাকবে, যারা সত্যিকার অর্থে মুজিব আদর্শ ধারন করে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তারাই যেনো প্রাধান্য পায়।’

আলোচনা আছে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী আবুল হাসানকে নিয়েও। স্থানীয় উচ্চ পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে তার সখ্যতাও চোখে পড়েছে সবার। তবে, আবুল নিজের পদ প্রত্যাশার কথা স্পষ্ট করে না বললেও, তিনি সভাপতি পদে একই বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী স্বজন বরণ বিশ্বাসকে চান বলে জানান।

সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে থাকলেও সভাপতি পদেও প্রার্থী কম নয়। আলোচনায় আছেন বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ ওয়াহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান বিদ্যুৎ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাসসহ অনেকেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও হল শাখাগুলোর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নেতৃত্বে যেনো রাজনীতিতে সক্রিয় এবং ত্যাগী যারা তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনো প্রকার, তদবির বা অর্থের বিনিময়ে বা স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে কেউ দায়িত্বে আসুক সেটি চাইছেন না তারা।

নতুন কমিটি প্রসঙ্গে বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘যেহেতু কমিটির মেয়াদ শেষ তাই যারা এতদিন রাজনীতি করেছে তারা নেতৃত্বে আসতে দৌড়ঝাঁপ করবে এটিই স্বাভাবিক। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে যে কোনো সময় আমি ও আমার কমিটি সম্মেলন দিতে প্রস্তুত আছি। আমার কেন্দ্রের কাছে এটিই কথা থাকবে যে, এতদিন যারা রাজনীতি করেছে, সময় দিয়েছে তাদের হাতে যেনো নেতৃত্ব আসে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এমন কাউকে যদি বাইরের কোনো প্রভাবে নেতৃত্বে আনা হয় তবে এতদিন যারা পরিশ্রম করলো তাদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হবে। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হবে, পড়াশোনার পরিবেশ ব্যহত হবে।’

(এসএন/অ/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০)