রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা  মকবুল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও মারপিটের ঘটনায় পাঁচদিন পর পুলিশ মামলা নিলেও তার আগে হামলাকারিদের  মিথ্যা মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। গত ৬ সেপ্টেম্বর একইসাথে দু’টি মামলা রেকর্ড দেখানো হয়।

অভিযোগ হামলাকারি জেরো সাইফুল, আব্দুস সালামসহ কয়েকজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরেনি।

মকবুল হোসেন জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের মীরাজ আলীর কাছ থেকে রাধানগরে একটি দোকান ভাড়া ও ১৯৯১ সাল থেকে দোকানের পিছনে আড়াই শতক জমি কেনার জন্য একই মালিককে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডোবা ভরাট করে অনুমতি সাপেক্ষে ঘরবাড়ি বানিয়ে স্বপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন তার বাবা দাউদ সরদার। মীরাজ আলী ১৯৯৮ সালে মারা যাওয়ার আগে ওই জমি লিখে দিয়ে যতে পারেননি বাবার নামে।

২০১৮ সালে বাবা দাউদ সরদার মারা যান। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মীরাজ আলী সরদারের ছেলে আব্দুস সালাম ও এক মেয়ের জামাই জেরো সাইফুল তাকে (মকবুল) ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। এ নিয়ে থানায় বসাবসি করা হয়েছে কয়েকবার। মকবুল হোসেনকে উচ্ছেদ করতে গত ১৪ মে সালাম ও সাইফুলের নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সে ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।

একইভাবে গত ৫ জুন সকালে মকবুলের বাড়িতে আবারো আবারো ভাঙচুর করলে ৫জুন রাত ৯টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। সে অনুযায়ি ৮ জুন রোববার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের বাড়িতে বসাবসির সিদ্ধান্ত হয়।

৬ জুন শুক্রবার সকালে সুলতানপুরের আওয়ামী লীগ নেতা নাসের ও তার সহযোগি প্রিন্স এর নির্দেশনায় সালাম, সাইফুল, সবুর, মুন্না ও বাসারসহ ৩০/৩৫ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার বাড়ি ভাঙচুর শুরু করলেও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান মামলা নেননি। ফলে হামলাকারিরা বেপরোয়া হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আব্দুস সালাম, তার নৈশপ্রহরী জামাতা সাইফুল ওরফে জেরো সাইফুল, আব্দুস সবুর, ব্যাংক কর্মী বাসার, ব্যাংক কর্মী মুন্নাসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সন্ত্রাসী অতর্কিতে তার বাড়িতে হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা শাবল, হাতুড়ি, গাইতি ও কোদাল দিয়ে বাড়ির দেয়াল ও ৫টি ক্লোবসিগ্যাল গেট, চারিট দরজা ভেঙে ফেলেন সর্বস্ব লুট করে। কিছু ব্যবহারিক জিনিকে টেনে হিচড়ে প্রাণসায়ের খালের পাশে ফেলে দেয় তারা।

সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা কেড়ে নেয় জেরো সাইফুল। সকাল থেকে থানায় ফোন দিলেও ৯টার দিকে পুলিশ আসে। একপর্যায়ে উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলামের সামনে তার স্ত্রী, মেয়ে, শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকাকেও বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। স্ত্রীকে ভর্তি হরা হয় সদর হাসপাতালে। বিরান ভূমি তে পরিণত করার পর দুপুরেই ওই জমিতে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। হামলার ঘটনা যাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ না হয় সেজন্য প্রভাবশালী হামলাকারিরা স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা অফিসে, সাংবাদিকদের কাছে মিষ্টি ও নগদ নজরানা পাঠায়।

ফলে হামলার প্রতিবেদন স্থানীয় কোন পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি। রাত সাড়ে ১০টায় তার স্ত্রী পারভিন আক্তার বাদি হয়ে থানায় এজাহার দিলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে যাওয়ার নাম করে কালক্ষেপন করে এজাহারের তারিখ কাটা ছেঁড়া করে ৬ তারিখ লিখে মামলা নেন। তবে প্রথমে হামলাকারিদের দেওয়া তাকেসহ মা, স্ত্রী, বোন ও ভগ্নিপতির নামে দেওয়া মিথ্যা মামলা রেকর্ড করা হয়। জামিনের সুবিধার্থে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলাটি পরদিন সকালে আদালতে পাঠিয়ে হামলাকারিদের জামিনের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিকেলে পাঠানো হয় হামলাকারিদের মামলাটি।

সোমবার ১৪ জনের মধ্যে নয়জন হামলাকারি জামিন পেয়ে পরদিন ভোরে তারা তাদের(মকবুল) অস্থায়ী ঘরবাড়িতে আবারো ভাঙচুর চালানোর উদ্যোগ নেয়। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোন না ধরায় বিষয়টি গভীর রাতে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজিকে অবহিত করা হয়। ড.খন্দকার মহিতউদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার বরাত দিয়ে ফোন করতে বললেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সরকারি নম্বরে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার তিনিসহ পাঁচজন মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীরের আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।

মকবুল হোসেন বলেন, হামলা মামলার প্রধান আসামী জেরো সাইফুল ও আব্দুস সালামসহ কয়েকজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জানালেও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরায় কয়েক বছর অবস্থানকারি উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান চোর পুলিশের খেলা খেলছেন। আসামীদের ধরা হবে কিনা মঙ্গলবার বিকেলে তার কাছে জানতে চান তিনি।
এ ব্যাপারে বুধবার সকালে সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, বুধবার দুপুরে মামলার ১,২ ও৩ নং আসামী অঅদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০)