রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাটামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে আশাশুনির গোয়ালডাঙা গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিক্ষক ফারুক মোল্লা আশাশুনি উপজেলার কাপষণ্ডা গ্রামের ছহিল উদ্দিন মোল্লার ছেলে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, শিক্ষক ফারুখ মোল্লা একই গ্রামের এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলায় অধিক রাতে বাদিনীর বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করতেন । বিষয়টি বাদিনী তার স্বামীকে জানান। স্বামী ফারুখ মাষ্টারকে তাদের বাড়ির উপর দিয়ে যেতে মানা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িতে কেউ না থাকার সূযোগে গত বছরের ৩ মে রাতে ফারুখ মাষ্টার বাদিনীকে ঘরের মধ্যে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন।

চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ফারুখ পালিয়ে যায়। থানা মামলা না নেওয়ায় ১৬ মে বাদিনী সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্রুনালে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। বিচারক হোসনে আরা আক্তার মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক মোঃ মামুনুর রহমান এজাহারভুক্ত ফারুক হোসেনের নামে আদালতে চুআন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বাদিনী এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজীর আবেদন দাখিল করেন। বিচারক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দেন। বিচারক পাভেল রায়হান ঘটনার সত্যতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করলে হোসনে আরা আক্তার আসামী ফারুখ হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার পুলিশ গোয়ালডাঙার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফারুখ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। বুধবার জামিনের আবেদন জানালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মফিজুর রহমান তার জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করেন।

এদিকে কাপষণ্ডা গ্রামের পানাউল্লহ সরদারের ছেলে মোস্তফা সরদারের উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর করা এক আবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বাকী বিল্লাহ এর গত ৭ জানুয়ারির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় কাপষণ্ডা গ্রামের ছহিলউদ্দিন মোল্লার ছেলে রুহুল আমিন ১৯৭৬ সালে পিএনএফ ধনীরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ১৯৮০ সালে তিনি নাম পরিবর্তণ করে ফারুখ হোসেন নাম দিয়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার এনজিসিএণ্ড এনসিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

স্থানীয়দের অভিযোগ মোস্তফা সরদারের অভিযোগটি সত্য বলে প্রমাণিত হলেও আজো পর্যন্ত দূর্ণীতিবাজ রুহুল আমিন বা ফারুখ হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি শিক্ষা বিভাগ। এ ছাড়া ধর্ষণের মামলা করায় ধর্ষিতা ও তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০)