শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তের দাওধারা-কাটাবাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসসহ বিভিন্ন সংগঠন। খোলা আকাশের নীচে থাকা এসব পরিবারের মাঝে তারা চাল-ডাল সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং গৃহস্থালী সামগ্রী বিতরণ করেছেন। 

১৬ আগস্ট শনিবার সকালে বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ টি পরিবারের প্রত্যেককে কারিতাসের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ৪ কেজি আলু, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি লবন, ২ টি করে থালা-গ্লাস এবং এক জোড়া করে এলুমিনিয়ামের হাড়িপাতিল প্রদান করা হয়। এছাড়া বারোয়ামারী ধর্মপল্লীর পক্ষ থেতে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আরও ৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ১১ লিটার কেরোসিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া দেলোয়ার হোসেন রিপন নামে এক ব্যবসায়ী কোরেসিন তেল কিনতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ২৫০ টাকা করে নগদ প্রদান করেছেন।
এসব বিতরণকালে অন্যান্যের মধ্যে কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক অফিসার অর্পূব, বারোয়ামারী ধর্মপল্লীর ফাদার মনিন্দ্র এন. চিরাণ, নালিতাবাড়ী ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের দাওদারা-কাটাবাড়ী এলাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যহাতির দল লোকালয়ে ঢুকে তান্ডব চালায়। এতে ১১ টি পরিবারের ১৯ টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয় এবং বন্যহাতির দল গোলার ধান-চাল খেয়ে সাবাড় করে। হাতির তান্ডবে ধ্বংস হয় আসবাপত্র সহ ঘরের সকল জিনিসপত্র এবং বাড়ীর আশপাশে চাষ করা কাসাভা (শিমুল আলু) ও আদা ক্ষেত। হাতির তান্ডবের পর থেকে বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বন্যহাতির তান্ডবে ঘর বাড়ি-সহায় সম্পদ হারিয়ে ওইসব পরিবারের সদ্যস্যরা এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। নালিতাবাড়ী ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা বলেন, এক যুগেরও অধিক সময় ধরে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বন্যহাতি তান্ডব চালাচ্ছে। তাই সরকারিভাবে এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
এদিকে, হাতির তান্ডবের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারীভাবে কোন সহায়তা না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মুকলেছুর রহমান রিপন শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে আক্রান্ত এলাকায় রাতের বেলায় বন্যহাতি তাড়াতে মশাল জ্বালানোর জন্য ২০০ লিটার কেরোসিন তেল বরাদ্দ দেওয়ার কথা বললেও সেই কেরোসিন তেল শনিবারও দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত জলেন্দ্র মানকিন ও সুজয় মারাক ক্ষোভের সাথে বলেন, আমরা মরলেই কি, আর বাঁচলেই কি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বদলী হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত ইউএনও’র দায়িত্বে রয়েছেন এসি ল্যান্ড শারমীন আক্তার কিন্তু তিনিও রয়েছেন ছুটিতে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুখলেছুর রহমান রিপন জানান, শুক্রবার ও শনিবার সরকারী ছুটির দিন থাকায় তাৎক্ষনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদান করা যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হবে।
(এইচবি/এএস/আগস্ট ১৬, ২০১৪)