রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ‘এসএসসি পাশ করার পর অনলাইনে এইচএসসিতে ভর্তির ফর্ম পূরণ  করেছিল বিউটি। ১৩ সেপ্টেম্বর দলুয়া শহীদ জিয়া ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তার। সে আর হলো না। বখাটে মৃত্যুঞ্জয় মেয়ের ছবির উপরের অংশ কেটে নীচে কাল্পনিক নগ্নছবি জুড়ে ফেইসবুকে ছড়িয়ে  দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। শেষ হয়ে গেছে বিউটি ও তাদের স্বপ্ন। বখাটে মৃত্যুঞ্জয় একা এ কাজ করতে পারেনি। এরসঙ্গে আরো অনেকে জড়িত। বিউটি আত্মহননে বাধ্যকারিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার শেষ করে ফাঁসি দিতে হবে।’

শনিবার সকালে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দলুয়া বাজারে কলেজ ছাত্রী বিউটি মণ্ডলকে আত্মহননে বাধ্যকারি মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর আয়োজিত দলুয়া বাজারে মানববন্ধনে কলাগাছি গ্রামের নিতাই মণ্ডল এসব কথা বলেন।

নিতাই মণ্ডল বলেন,‘৩ সেপ্টেম্বর মেয়ের ছবির উপরের অংশ কেটে নীচে কাল্পনিক নগ্নছবি জুড়ে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মোবাইলে একের পর এক খবর আসে। পরদিন সকালে মোবাইল বন্ধ করে একই গ্রামের রঘুনাথ রায়ের কাছে ছুঁটে গিয়েছিলাম ভাইপো মৃত্যুঞ্জয়কে সতর্ক করতে। মেয়ের অপুরণীয় ক্ষতি হতে পারে জানানোয় রঘুনাথ বলেছিল তার ভাইপো এমন কাজ করতে পারে না। অথচ মেয়েটি অপমান সহ্য করতে না মেরে মৃত্যুকে মেনেই নিল। এটা মেনে নিতে পারছি না।

৪ সেপ্টেম্বর ভাই ডাক্তার দীপঙ্কর মণ্ডল মেয়েকে রাস্তাঘাটে উত্যক্তকারি মৃতু্যুঞ্জয় এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে গেলে আমলে নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি পার্শ্ববর্তী গ্রামের উপপরিদর্শক মানিককে জানালে তার কথামত পুলিশ অভিযোগটি নিলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সকালের অজান্তে ঘরের আড়ায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহনন করতে বাধ্য হলো। পুলিশ মৃত্যুঞ্জয়কে সতর্ক করলে মেয়েকে বাঁচানো যেতো।’

এদিকে মানববন্ধন চলাকালে বিউটি মণ্ডলের জ্যাঠাইমা মাধবী মণ্ডল ও কাকিমা শ্যামলী মণ্ডল বলেন, স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে গ্রামের মুদি দোকানদার জগদীশের ছেলে বখাটে মৃত্যুঞ্জয় প্রতিনিয়ত বিউটিকে উত্যক্ত করলেও অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। মেয়ের মৃত্যুর পর মা নির্বাক হয়ে গেছে। মৃত্যুঞ্জয় এর অভিবাবকদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিউটির সহপাঠী মিতা সরকার ও শ্রাবন্তী সরকার বলেন, বিউটির মত আর কারো যাতে আত্মহননের পথ বেছে নিতে না হয় সেজন্য সকলকে এই মানববন্ধন থেকে শপথ নিতে হবে। যেখানে বখাটে সেখানে প্রতিবাদ করতে হবে।

এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় সরকার, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, আমেনা বিলকিস ময়না, দীপায়ন মণ্ডল, তুষার মণ্ডল, সমীর কুমার দাস প্রমুখ।

ঘণ্টাব্যাপি মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মানববন্ধন শুরুর আগেই মৃত্যুঞ্জয়কে পরিবারের পক্ষ থেকে খেশরা পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করেছে শুনেছি। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দ্রুত বিচার শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

এ ব্যাপারে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী রাসেল বলেন, এ ঘটনায় দীপঙ্কর মণ্ডল বাদি হয়ে মৃত্যুঞ্জয় এর নাম উল্লেখ করে ভাইঝি বিউটিকে আতহননে বাধ্য করার অপরাধে ৯ সেপ্টেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক পিযুস কান্তি ঘোষ আদালতে পাঁচ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়েছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০)