সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : কেন্দুয়ায় থানা হাজতে ধরে এনে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে গোলাম মোস্তফা। জুয়া খেলার অভিযোগে গত ৪ জুন রাতে তার অন্যান্য সঙ্গী সহ গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরিফুল হকের কেন্দুয়া নেত্রকোনা আমলি আদলাতে গোলাম মোস্তফা একটি অভিযোগ দায়ের করলে গত ৩১ আগস্ট অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানায় মামলা রেকর্ড করে একজন সহকারি পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তদন্তের জন্য নেত্রকোনা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে নেত্রকোনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সির নির্দেশে ৮ সেপ্টেম্বর ওসির বিরুদ্ধে মামলাটি কেন্দুয়া থানায় রেকর্ড করা হয়।

শনিবার ১২ সেপ্টেম্বর ওই মামলার তদন্তে আসেন খালিয়াজুরি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জামাল উদ্দিন। তিনি মামলার বাদী গোলাম মোস্তফাকে সঙ্গে নিয়ে সাউদপাড়া ও থানা হাজত ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে থানা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, মামলাটি অত্যান্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বিস্তারিত তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছেনা। তদন্ত কার্য শেষ হলেই এর ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

মামলার বাদী গোলাম মোস্তফার অভিযোগ, চলতি বছরের গত ৪ জুন রাতে পৌর শহরের সাউদপাড়া মহল্লার জনৈক এনামুল হকের বাড়িতে তারা একটি সামাজিক দরবারে বসছিলেন কয়েকজন। কিন্তু দরবার চলাকালে ওসি সহ পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে জুয়া খেলার ঘটনা সাজিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে থানা হাজতে ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান পূর্ব শত্রুতা বশত তাকে অমানবিক নির্যাতন ও পায়ুপথে মরিচের গুড়া দেয়। তাদের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা দিয়ে পরদিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কেন্দুয়া নেত্রকোনা আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে গোলাম মোস্তফা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফলাফল না পেয়ে অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, গত ৪ জুন রাতে জুয়া খেলার আসরের খবর পেয়ে সাউপাড়া এলাকায় জনৈক এনামুলের বাড়ি থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি সহ ৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলামনা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জুয়া আইনে কেন্দুয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে পরদিন নেত্রকোনা আদালতে পাঠায়।

ওসি অভিযোগ করে বলেন, মাদক জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের শক্তিশালী কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় আমার বিরুদ্ধে সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মামলার বাদী গোলাম মোস্তফাকে নির্যাতনের কথা আদালতে জামিন নেয়ার সময় আদালতকেও জানায়নি মোস্তফা। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরিকল্পিত ভাবে আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত ভাবে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০)