সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : আগামী মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও মাজরা পোকার আক্রমনের কারণে অনেক আমন ধানক্ষেত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষককূল। সময়মত ধানক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শের অভাবে ধান ক্ষেত্রে মাজরা পোকার আক্রমন খুব বেশি দেখা দিয়েছে। এখন ক্ষেত্রে ওষুধ ছিটিয়েও কোন কাজে আসছেনা। এমন দাবীই করছেন কৃষকরা।

তবে পোকার কবল থেকে রক্ষার জন্য ভিন্ন কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। ধানক্ষেতে পোকা দমনের জন্য গাছের ডালপালা বা বাঁশের কঞ্চি পুতে পার্চিং ব্যাবস্থা চালু করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কেন্দুয়া উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে ২০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলাকে মোট ৪০টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ব্লকেই কৃষকের আবাদ করা জমির সুবিধা অসুবিধা ও বিভিন্ন পরামর্শ দানের জন্য একজন করে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৪০টি ব্লকের ১৬টিতেই উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নেই। ফলে এসব ব্লকের কৃষকরা কোন ভাল পরামর্শ না পেয়ে এক ধরনের হতাশায় ভোগছেন।

উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের টিপ্রা ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ মিয়া জানান, এই মাজরা পোকাটি অনেক জটিল। এটি ধানগাছের পাতায় ডিম পারে। এর পর নিচে গাছের মূলে গিয়ে ছিদ্র করে ঢুকে ধানগাছের ভেতর লুকিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, মাজরা পোকার আক্রমন থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় কৃষকদেরকে জমিতে পার্চিং অর্থাৎ ধান ক্ষেতের মাঝেমাঝে গাছের শুকনো ডালপালা অথবা বাশেঁর কঞ্চি পুতে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে ওই পুতে রাখা ডাল পালা বা কঞ্চিতে বসে পাখিরা সহজেই ক্ষেতের পোকা খেয়ে ফেলতে পারে। এভাবে যদি ধান ক্ষেতে কঞ্চি বা ডালপালা পুতে রাখা যায় তাহলে সহজেই অনেক পোকা দমন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, যেসব ব্লকে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা নেই সেসব ব্লকে পাশের ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করছেন।

রবিবার সরেজমিন গেলে সাজিউড়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মিয়া, হরিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, মাসকা গ্রামের চান মিয়া ও দিঘলী গ্রামের মোস্তাক আহমেদ বলেন, মাজরা পোকায় আমাদের ধান ক্ষেত খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। ভিরতাকু নামক ওষুধ ২ বার ছিটিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তাকেও এসে পরামর্শ দিতে আমরা দেখিনি। মাজরা পোকার পাশাপাশি ইঁদুরেও ধানগাছ কেটে ফেলছে তারা জানান।

গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বাবলু বলেন, মাজরা পোকার আক্রমন থেকে ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য কৃষকরা জমিতে স্প্রে করে ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছেন। তিনি পোকা দমনে কৃষি বিভাগকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।

মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান খুকুমনি কৃষকদের বরাত দিয়ে বলেন, মাজরা পোকায় ধান গাছের মাইন কেটে ফেলছে। এতে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। দুইবার করে ওষুধ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা বলে কৃষকরা তাকে জানিয়েছেন।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০)