কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : মাদক জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষনার পর থেকেই কেন্দুয়া থানা পুলিশ মাদক ও জুয়া প্রতিরোধে কোমর বেধে মাঠে নামেন। কিন্তু জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সফল হলেও জুয়ারী ধরতে গিয়ে খোদ পুলিশই এখন বিপাকে পড়েছেন।

জুয়ারীদের গ্রেফতার করে থানা হাজত থেকে আদালতে পাঠানোর ৩ মাস পর পুলিশের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। এলাকার সচেতন মহল এই জুয়ারী চক্রের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী তুলছেন। না হয় একদিন এই জুয়ারীরা এলাকায় মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে শান্তিশৃঙ্খলা পরিবেশ নষ্ট করবে।

কেন্দুয়া উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি কামরুল হাসান ভূঞা বলেন, চলতি বছরের গত ৪ জুন রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার আসর থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা সহ ৯ জুয়ারীকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাদেরকে জুয়া আইনে মামলা দিয়ে নেত্রকোনা আদালতে পাঠায়। কিন্তু গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলিমপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে গোলাম মোস্তফা ৩ মাস পর থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি কমিউনিটি পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করে বলেন, এই জুয়ারী চক্রটি একটি শক্তিশালী চক্র। এরা আন্তজেলা জুয়ারী চক্রের সদস্য। অবাদে জুয়া খেলা খেলতে না পেরেই গোলাম মোস্তফা পুলিশের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। নাহয় তাকে থানা হাজতে নির্যাতন করলে পরদিন আদালতের সামনেও আইনজীবীর মাধ্যমে নির্যাতনের কথা তুলে ধরতে পারত। তিনি ওসির বিরুদ্ধে এই সাজানো মামলা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যাহারের দাবী জানান।

একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই জুয়ারী চক্রের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে এবং সাজানো মামলার প্রত্যাহারের জন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করে বিচার দাবী করব।

কেন্দুয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোস্তাফিজ উর রহমান বিপুল বলেন, ছিলিমপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা, চিরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন। ৪ জুন রাতে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি সহ পুলিশের হাতে ধরা পরেন। যুবলীগের ভাবমূর্তি রক্ষায় তার এসব অপকর্মের জন্য ৭ জুন তাকে দল থেকে বহিস্কারের আদেশ দেই।

তিনি বলেন, এসব জুয়ারীদের দাপটে সমাজের সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ। জুয়া খেলার আসর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করার পর আদালতে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু জামিন নিয়ে ৩ মাস পর একটি প্রভাবশালী চক্রের প্রত্যক্ষ মদদে গোলাম মোস্তফা ওসি রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি সাজানো মামলা দায়ের করে। এই মামলা নিয়ে সমাজের সকল মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে সাজানো মামলা প্রত্যাহারেরও দাবী জানাই। সাজানো মামলা নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের মুক্তিযোদ্ধাগণ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওসি রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছেন।

তারা বলেন, ওসি রাশেদুজ্জামান কেন্দুয়ায় যোগদানের পর থেকেই মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে আপোষহীন ভাবে কাজ করে চলছেন। এইজন্য জুয়ারীরা তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে সাজানো মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রেসক্লাব সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা বলেন, গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত মাসিক উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

তিনি বলেন, সরকারি কাজে বাধা ও জুয়া মাদকের বিরুদ্ধে কার্যক্রমকে বাধা গ্রস্থ করতেই কেন্দুয়া থানা ওসি রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো অভিযোগ দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। হয়রানি করা হচ্ছে প্রশাসনকেও। জুয়ারী গ্রেফতারের ৩ মাস পর জুয়ারীকে নির্যাতনের সাজানো মামলা হাস্যকর। আমরা দলের এবং সুশিল সমাজের পক্ষ থেকে এই সাজানো মামলা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।


(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০)