স্টাফ রিপোর্টার : ভারতে ইলিশের প্রথম চালান যাওয়ার দিনেই পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো দেশটি। এ ঘোষণায় কিছুটা সমস্যা হলেও গতবারের মতো খারাপ পরিস্থিতি হবে না বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় তুরস্ক থেকে চলতি মাস শেষেই আসছে পেঁয়াজ। এমনকি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি।

এর আগে গত বছরও ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। সেসময় বাড়তে বাড়তে ৩০০ টাকায় ঠেকেছিল দাম। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। তবে এদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ১২ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য স্থলবন্দরেও। ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, 'সোমবার কিছু নীতিগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে।'

এদিকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের খবরে নড়েচড়ে বসেছে বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থানের পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যার পরপরই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে বর্তমানে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগে দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরি ভিত্তিতে তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিটুজি বৈঠকের পর মিয়ানমার থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনবেন বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত পাঁচ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, 'ভারত বন্ধ করে দেওয়ায় একটু সমস্যাতো হবে। তারাতো আজকেই বন্ধ করলো। আমরা বিকল্প মার্কেট হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তারা আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার, মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যোগাযোগ করেছি।'

তিনি বলেন, 'তুরস্ক থেকে আগামী চার পাঁচ মাসের মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এছাড়া টিসিবি ন্যায্য মূল্যে ট্রাক সেল শুরু করে দিয়েছে। আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। তুরস্ক থেকে কিছু কিছু আসা শুরু হয়েছে। এই মাস শেষে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ চলে আসবে। ধাপে ধাপে ১০ দিন পর পর তিন চার হাজার টন করে আসবে।'

আলোচনা ছাড়া ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো কেন জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ও বৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হয়েছে সম্ভবত সেই কারণেই তারা রপ্তানি বন্ধ করেছে।' স্থলবন্দরে আটকে থাকা পেঁয়াজের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে তারা অবশ্যই সিদ্ধান্ত দেবেন। যেহেতু এলসি করা হয়ে গেছে বর্ডারে শত শত ট্রাক পেঁয়াজ আটকে আছে। এই মাসের মধ্যেই সেগুলো আসার সম্ভাবনা আছে।'

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, 'আমরা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। এবার গতবারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো শঙ্কা নেই।'

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ও বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের জন্য রোববার থেকে সারাদেশে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ। টিসিবির ট্রাক থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে ৩০ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে সে সময় দেশের বাজারে হু হু করে দাম বাড়ে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে রেকর্ড ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠে।

(ওএস/পি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ইং)