স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই দেশের বাজারে বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম। একদিন ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। সোমবার সকালেও পণ্যটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর একমাস আগেই দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

পেঁয়াজের বাজার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে গত রবিবার থেকে ৩০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এদিকে ভারতের এই ঘোষণায় কিছুটা সমস্যা হলেও গতবারের মতো খারাপ অবস্থা হবে না বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ, এবার গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। তুরস্ক থেকে চলতি মাস শেষেই আসছে পেঁয়াজ।

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বাণিজ্য সচিব মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকদের কাছে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে চিঠি পাঠানোসহ পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, পেঁযাজের দাম নিয়ন্ত্রণে ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী ও নাটোর জেলা প্রশাসককে পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বাণিজ্য সচিব কর্তৃক ডিও পাঠানো হয়েছে। পেঁয়াজের বিষয়ে দ্রুত সংনিরোধ সনদ ইস্যু করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠিসহ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারকদের এলসি খোলাসহ সার্বিক সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানানো হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ স্থলবন্দর (বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ ও হিলি) থেকে দ্রুততম সময়ে ছাড় করার জন্য আমদানিকারকদের সহযোগিতা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।

এছাড়া ৩ জন যুগ্মসচিবকে পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য পেঁয়াজ অধ্যুষিত জেলা (পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর) পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। স্থল ও নদী বন্দরে পেঁয়াজের আমদানি পরিস্থিতি, কন্টেইনার জট ও কৃত্রিম সংকট আছে কিনা তা দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরি ভিত্তিতে তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিটুজি বৈঠকের পর মিয়ানমার থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনবেন বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। তবে এদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ১২ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য স্থলবন্দরেও। ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার কিছু নীতিগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে।

এদিকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের খবরে নড়েচড়ে বসেছে বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থানের পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় একটু সমস্যা তো হবে। তারা তো আজকেই বন্ধ করলো। আমরা বিকল্প মার্কেট হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তারা আমাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যোগাযোগ করেছি।

তিনি বলেন, তুরস্ক থেকে আগামী চার পাঁচ মাসের মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এছাড়া টিসিবি ন্যায্য মূল্যে ট্রাক সেল শুরু করে দিয়েছে। আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। তুরস্ক থেকে কিছু কিছু আসা শুরু হয়েছে। এই মাস শেষে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ চলে আসবে। ধাপে ধাপে ১০ দিন পর পর তিন চার হাজার টন করে আসবে। আমাদের পাইপলাইনে আছে, পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার থেকেও আমদানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি আমরা অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে সেই সময় দেশের বাজারে হু হু করে দাম বাড়ে পণ্যটির। রেকর্ড ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে পেঁয়াজের কেজি। এই পরিস্থিতি চলমান ছিল কয়েক মাস। তখন ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম প্রতি টনের মূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানিই নিষিদ্ধ করে। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরিও অতিক্রম করে। নভেম্বরে ৩০০ টাকা ওঠে পেঁয়াজের কেজি। তখন মিয়ানমার, চীন, মিসর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। প্লেনেও আনা হয় পেঁয়াজ।

(ওএস/পি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ইং)