নিউজ ডেস্ক : ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কঠোর বিধি-নিষেধে ফেরার পাশাপাশি দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন জারি করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে একশ দিন পর করোনায় প্রথম মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে শুক্রবার।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, 'নভেল করোনাভাইরাসের পুনরুত্থান ঠেকাতে কিছুদিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশজুড়ে লকডাউন জারি করেছে ইসরায়েল। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ইহুদি নববর্ষের আগে দেশটিতে এই লকডাউন জারি করা হয়েছে।'

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে এই লকডাউন শুরু হয়ে বলবৎ থাকবে আগামী ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত। ইহুদি নববর্ষ রোশ হাশানা শুরুর আগে এই লকডাউনের বিরোধিতাও করেছেন দেশটির অনেক নাগরিক। দেশটির নতুন নিয়মে ইসরায়েলিরা নিজ বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। তবে জরুরি কেনাকাটা, শরীর চর্চা এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য নিজ এলাকা ত্যাগ করতে পারবেন। সীমিত পরিসরে কর্মস্থল সচল রাখা যাবে।

এছাড়া জনসমাগম ও পারিবারিক অনুষ্ঠানেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়মে ১০ জনের বেশি মানুষ কোনও অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এদিকে, থাইল্যান্ডে ১০০ দিনের বেশি সময় পর করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয়েছে দেশটির এক নাগরিকের। চলতি মাসে সংক্রমিত ওই ব্যক্তি বিদেশ থেকে ফেরেন বলে দেশটির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতি আটদিনে দ্বিগুণ হচ্ছে জানিয়ে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে ফের লকডাউন সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে সতর্ক করেছে ব্রিটিশ সরকার। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ‘আমরা দেশজুড়ে ফের লকডাউনের বিপক্ষে, কিন্তু প্রয়োজন হলেই তা করতে প্রস্তুত আমরা।’

তিনি বলেছেন, ‘জীবন-জীবিকা বাঁচানোর জন্য যা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি।’ করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করার পর ইংল্যান্ডের বিশ লাখ মানুষের জন্য ফের বিধিনিষেধ জারির পর তিনি এসব কথা বলেন।

ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে একদিনে রেকর্ড ১০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। ভাইরাসটির ক্লাস্টারের সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশজুড়ে আইসিইউতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হারে।

গত সপ্তাহে দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বসন্তের চেয়ে আইসিইউতে করোনা রোগী ভর্তির এই হার ১০ গুণ কম হলেও যেভাবে বাড়ছে সেটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির চিকিৎসকরা। অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়া লকডাউন দ্বিতীয়বার জারি না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফরাসী সরকার। যে কারণে ভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনার জন্য দেশজুড়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।

দেশটির বিভিন্ন শহরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, জনসমাগমের আকার সীমিত এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া করোনায় ইতোমধ্যে বিশ্বের তিন কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে নয় লাখেরও বেশি। বিশ্বে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ লাখ ৭৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা গেছেন অন্তত ২ লাখ ২ হাজার ২১৩ জন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতে লাগামহীন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। গত কয়েকদিন ধরে দেশটিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রায় এক লাখ করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ৮৪ হাজার বেশি।

ভারতের পর ব্রাজিলে ৪৪ লাখ, রাশিয়ায় ১০ লাখ, পেরুতে সাড়ে সাত লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

(ওএস/পি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০ইং)