রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ এডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস শাখার নামে ইজারাকৃত জমি জবরদখল করে নির্মাণাধীন পাকা ঘর  তিন দিনের মধ্যে ভেঙে নেওয়ার লিখিত প্রতিশ্র“তি দিলেও কথা রাখেননি সাতক্ষীরা সীমান্তের লক্ষীদাড়ি গ্রামের ভূসিদস্যু ইদ্রিস আলী। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ফিরে পাওয়া লক্ষীদাড়ির রবিন সরদারের  জমি জবরদখল করে ভাড়াটিয়া বসিয়ে মাসে আয় করছেন ৫০ হাজারের বেশি টাকা। ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদে  জমির কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হস ইদ্রিস। ফলে ইদ্রিসের ভাড়া দেওয়া ব্যবসায়িদের লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ায় রবিন সরদারের পরিবারকে দেশ ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভূমিদস্যু ইদ্রিসের খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন।

ভোমরা ইউপি সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোনাজাত গাজী জানান, এক সময়কার ভারতের ঘোজাডাঙার বাসিন্দা খালেক গাজী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী লক্ষীদাড়ি গ্রামে চলে আসেন স্বপরিবারে। ভারতে চলে না যাওয়া বলাই সরদার ও তার শরিকদের পানি উন্নয়ন বোর্ড এর অধিগ্রহণকৃত ৮১ শতক জমিসহ কয়েক একর জমির কাল্পনিক বিনিময় দলিল তৈরি করে জবরদখল শুরু করেন। মেয়ে রোকেয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকুরি করার সুবাদে তহশীলদার আবু বক্করকে ব্যবহার করে দাগ ও খতিয়ান কাটা ছেড়া করে অবৈধভাবে বাবা খালেকের নামে কাগজপত্র তৈরি করলেও দুদকের মামলা ঘাড়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। খালেকের পক্ষে রেকর্ড জালিয়াতির সহযোগিতার অভিযোগে দুদকের একই মামলায় তহশীলদার আবু বক্করকে জেলখানায় মরতে হয়।

সদর সহকারি ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে খালেক মারা যাওয়ার আগে বিনিময় দলিল বৈধ করতে না পারায় তার ছেলে ভূমিদস্যু ইদ্রিস মা ছকিনা খাতুনের নামে কাল্পনিক একটি অনিবন্ধিত দলিল সৃষ্টি করেন। আদালতে মামলা করে বার বার হেরে যাওয়ার পরও ইদ্রিস, তার মা ছকিনা খাতুন ও বোন রোকেয়া সরকারি ও অন্যের মালিকানাধীন জমি নতুন করে মামলা করে কৌশলে জবরদখল রেখেছেন। বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস সাতক্ষীরা শাখার নামে ইজারাকৃত জমি নিজের দখলে রাখতে ‘ক’ তপশীলের ১/১ সরকারি খাস খতিয়ানের জমি ট্রাইব্যুনালে মামলা না করে চাটুকারিতার আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ২৬৪ খতিয়ান দেখিয়ে সাব জজ -১ এ জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দেঃ ১৩৩/১৮ মামলা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নেন। রাষ্ট্রপক্ষ সদর সহকারি কমিশনার(ভূমি) ইদ্রিস ও ছকিনার বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা(৭৮/১৮) করে সাব জজ প্রথম আদালতে মামলা করা ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করার পরও করোনা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জোরপূর্বক পাকা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি জমি জবরদখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে গত ৭ মে বিভিন্ন প্রত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়া ইদ্রিস সদর সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিসে র‌্যাব কর্মকর্তার সামনে তিন দিনের মধ্যে ওই নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে নেওয়ার জন্য মুচলেকা দিলেও তিনি শর্ত মানেননি। বরং তাকে র‌্যাব, পুলিশ, ডিসি কেউ কিছু করতে পারবে না বলে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এক সময়কার শ্রমিক সরদার হয়ে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎকারি ইদ্রিসের নিদ্দিষ্ট কোন পেশা না থাকলেও মাদক ও সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে ইদ্রিস ভোমরা, সাতক্ষীরা, লক্ষীদাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক কোটির ও বেশি টাকার স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের রবিন সরদারের ছেলে মিঠুন সরদার বলেন, জবরদখল করে রাখা তার পৈতৃক জমি উদ্ধারে ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদে ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে প্রথম দিনে হাজির হলেও বিনিময় দলিল বৈধ করতে পারেনি এটা স্বীকার করে পরবর্তী দিনে আর কোনদিন হাজির হননি ইদ্রিস আলী। গত ১৫ আগষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার পক্ষে রায় দেওয়ার পর তিনি তার জমিতে অবস্থানকারি ইদ্রিসের ভাড়াটিয়া দাবিদার সাতহন ব্যবসায়িকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। গত বৃহষ্পতিবার ওই ব্যবসায়িরা নোটিশ পাওয়ার পর ইদ্রিসকে জানান। এতে ক্ষুব্দ ইদ্রিস তাকে ও পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে দেখে নেওযার হুমকি দিচ্ছেন। ইদ্রিসের অনিয়ম, দূর্ণীতি ও অবৈধ সম্পদের মালিকানার বিরুদ্ধে দূর্ণীতি দমন কমিশন, ভূমি মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ খবরে ইদ্রিসের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষীদাড়ি গ্রামের মৃত খালেক গাজীর ছেলে সাবেক শ্রমিক সরদার ইদ্রিস আলী নিজেকে চোরাকারবারি বা রাষ্ট্র বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস এর জমি নিয়ে তাদের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। তিনি গত ৭ মে সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিসে যেয়ে তিন দিনের মধ্যে নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে নেওয়ার ব্যাপারে মুচলেকা দিয়ে এসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু আদালতে বিচারাধীন ওই জমির বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি শর্ত মানেননি। বিনিময় দলিল সারাজীবন বৈধ না হলেও যতদিন মামলা চালাবেন ততদিন রবিন বা সরকারপক্ষ কাউকে জমির দখল ছেড়ে দেবেন না।

ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মোঃ মহসীন আলী বলেন, ইদ্রিস পরিবারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়েরকৃত রিভিশন মামলার রায় খুব শীঘ্রই তারা পেয়ে যাবেন বলে তারা আশাবাদি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০)