সিনিয়র রিপোর্টার : ইয়াবা বহনের অভিনব কৌশল এবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। দেখে বোঝার কোন উপায় নাই। শরীরে তল্লাশি করেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

তল্লাশি চালিয়ে সহজে যাতে খুঁজে না পাওয়া যায়, এজন্য নারী মাদক পাচারকারীরা অভিনব কৌশলে ইয়াবা বহন করছে। ইয়াবা বহনের বিশেষ কৌশল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

বিশেষ পন্থায় রাজধানীতে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে ভয়াল নেশা ইয়াবা।

সাম্প্রতিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, নারী মাদক পাচারকারীরা গোপনাঙ্গের ভেতর ইয়াবা প্রবেশ করে রাজধানীতে নিয়ে আসছেন। এসব নারী মাদক পাচারকারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দীর্ঘক্ষণ গোপন অঙ্গে ইয়াবা রাখার প্রশিক্ষণও আছে তাদের।

জানা গেছে, গোপন অঙ্গে ৮শ' ইয়াবা রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাদক পাচারকারী নারীদের। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে তারা সংবেদনশীল অঙ্গকেই বেছে নিয়েছেন।

আকারে ছোট তাই নারী মাদক পাচারকারীরা গোপনাঙ্গের ভেতরেই নিয়ে আসছেন ইয়াবা। এক্ষেত্রে তারা এখন পাচারের বাহন হিসেবে ট্রেনকে ব্যবহার করছেন। রাজধানীতে ইয়াবার বড় চালানই এখন রেলপথে আসছে। তবে মাঝে মাঝে তাদের রুট পরিবর্তন হয়।

গত শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে এক নারীর যৌনাঙ্গের ভেতর ৭শ' পিস ইয়াবা উদ্ধারের পরই নড়েচড়ে বসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিনব কৌশলেই লুকানো ছিল এসব ইয়াবা।

কমলাপুর স্টেশনের জিআরপি সূত্র জানায়, মুক্তা বেগম (২৮) নামে ওই পাচারকারী বিশেষ পদ্ধতিতে কনডমের ভিতর লুকিয়ে এনেছেন ইয়াবা। দীর্ঘক্ষণ ট্রেনে থাকায় স্টেশনে নামার পর হাঁটায় একটু ব্যতিক্রম দেখলে সন্দেহ জাগে জিআরপির। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ। পরে নারী পুলিশ দিয়ে তল্লাশি।

উদ্ধার অভিযানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তা বেগম চট্টগ্রাম মেইলে চট্টগ্রাম থেকে কমলাপুরে আসেন। প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। পরে নারী পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করা হয়। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশির এক পর্যায়ে উদ্ধার হয় ইয়াবা। গোপন অঙ্গের ভেতরে কনডম দিয়ে মোড়ানো ছিল ৭শ' পিস ইয়াবা।

জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ বলেন, কমলাপুর স্টেশনে এ পদ্ধতিতে (যৌনাঙ্গের ভেতর কনডম দিয়ে মোড়ানো) ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। এ ঘটনার পরই জিআরপি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে এক মাদক পাচারকারীর পায়ুপথ এবং আরেক মাদক পাচারকারীর অন্তর্বাসের ভেতর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে জিআরপি।

জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তা স্বীকার করেছেন এর আগেও তিনি একাধিকবার এভাবে ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বর্তমানে এভাবে আরও অনেক মাদক পাচারকারী নারী রাজধানীতে ইয়াবা নিয়ে আসছেন বলে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গোপন অঙ্গে ইয়াবা বহন করলে তা খুঁজে বের করা কঠিন। বর্তমানে স্পর্শকাতর জায়গার ভেতরেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাচারকারীরা ইয়াবা বহন করে আনছেন। এক্ষেত্রে কয়জনের কাছ থেকেই বা এভাবে তল্লাশি করে বের করা যাবে! এজন্য সীমান্তেই জোরদার করা দরকার।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ইয়াবা পাচারকারীরা নারীদের যৌনাঙ্গসহ সংবেদনশীল অঙ্গ, পুরুষরা পায়ুপথে ইয়াবা বহন করছেন। এছাড়া মাছ, চানাচুরের প্যাকেট, আসবাবপত্রের জয়েন্ট, মোটরসাইকেল, গাড়ির বিভিন্ন অংশ, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, সুপারি, ক্যামেরা, মোবাইল সেট, কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করছে মরণ নেশা ইয়াবা।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মূলত মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করে ইয়াবা। এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে এভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১৭, ২০১৪)