কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় জনসমাগম ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের জন্য মিলনায়তন প্রস্তুত রাখা হলেও আলোচনা সভায় উপস্থিত মানুষের সংখ্যা ছিল সর্ব সাকুল্যে ৭০/৮০ জনের মতো।

যা দেখে চটে গিয়ে আয়োজকদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকার। সভায় উপস্থিত কম হওয়ায় আমন্ত্রিত অতিথিরাও ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় শোক দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি শোক র‌্যালি বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শোক সভা শুরু হয়। এসময় মিলনায়তনে দর্শক শ্রোতাদের উপস্থিতি কম হওয়া লজ্জায় পড়ে যান আয়োজকরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন—‘একটু আগে র‌্যালির পেছন থেকে স্লোগান হচ্ছিল, এক মুজিব লোকান্তরে, লাখ মুজিব ঘরে ঘরে। কোথায় সেসব মুজিব সেনা? শেখ মুজিব শুধু মিছিল-মিটিংয়ে নেতৃত্ব দেননি। তিনি দেশ গড়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।

র‌্যালিতে যারা উপস্থিত ছিলেন কিন্তু আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন না তাদেরকে উদ্দেশ্য করে উপাচার্য বলেন—‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকের সিল লাগিয়ে ঘুরলেই হবে না। মাঠে ময়দানে কাজ করতে হবে। তিনদিন আগে থেকে ক্যাম্পাসে মাইকিং করার পরেও উপস্থিতি এমন কেন?’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন—‘বক্তব্য দেয়ার জন্য এসেছিলাম কিন্তু উপস্থিতির অবস্থা দেখে মন চাইছে না। বক্তৃতা দিতে হলে শ্রোতার প্রয়োজন।’
আলোচনা সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাতীয় শোক দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু কার্যত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

জানা যায়, গত তিনদিন ধরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, বঙ্গবন্ধু হলো, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভ্রাম্যমাণ মাইকিং করে আসছে। এত প্রচার প্রচারণার পরেও শোক সভায় জনসমাগম কম হওয়ায় আয়োজক কমিটি হতাশ বলে জানা গেছে। এছাড়া গতকাল শোকসভা ও র্যালিতে জনসমাগম বাড়াতে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কতিপয় শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি পড়াশোনা করার জন্য। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়।’
আলোচনা সভায় অংশ নিতে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রত্যক্ষভাবে চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ মিলনায়তনে শোকসভা চলাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। ছাত্রলীগের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কতিপয় শিক্ষক।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন—‘রাগ করি নাই। তবে উপস্থিতির সংখ্যা দেখে হতাশ হয়েছি।’ এরকম অনুষ্ঠানে এমন উপস্থিতি দেখে রাগ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১৭, ২০১৪)