কুড়িগ্রামে ফের বন্যা : ধরলার পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপরে, জনদুর্ভোগ চরমে
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামে এযাবৎকালের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আবারো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে নিম্নাঞ্চলগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে রোপা আমনক্ষেত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ধরলার নদীর পানি ২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার ধরলা ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র ঘন্টার অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে সমগ্র জেলা শহরে জল জটের সৃষ্টি হলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সহ সমস্ত অলি-গলিতে হাঁটুপানি দেখা গেছে, অনেকের বাড়ীঘরে পানি ঢুকে ফ্রিজ টিভিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। কুড়িগ্রামে রবিবার সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ১৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বলে স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর জানায়। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এসব নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। নদ-নদী অববাহিকাসহ চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় চরম দূর্ভোগের মুখে পড়েছে মানুষজন। এসব এলাকার আমনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এছাড়াও নদীতে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জেলার সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অন্তত: ৩০টি পয়েন্টের ভাঙ্গনে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। হারিয়ে ফেলছে মাথা গোঁজার ঠাঁই, অনেকে খোলা আকাশের নিচে নিদারুণ কষ্টে রয়েছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, পরপর ৩ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর জন্য চরাদামে আমন চারা কিনে এনে লাগিয়েছিলেন। তার পুরোটাই এখন পানির তলে।
সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ধরলা নদীর অববাহিকার ঘর-বাড়ি নতুন করে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে কমপক্ষে ৭০টি পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ি হারানো এসব পরিবারকে শুধু সরকারী চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৮৫ মেট্রিক টন চাল, ১ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৪ লাখ টাকা গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন করে ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১০ লাখ টাকা ও ২শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
(পিএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০)