স্টাফ রিপোর্টার : ‘একা বাঁচতে চাই না, বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচব আর মরলেও একসঙ্গে। ৩০ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রতিদিন ধরনা দিয়েও বিমানের টিকিট পাচ্ছি না। সৌদি দূতাবাসের নির্ধারিত এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সৌদি কফিলের (মালিক) কাছ থেকে ছুটি ও ভিসা বাড়ানোর অনুমতিসহ নানা ডকুমেন্ট নিয়ে আসার কথা বলে। আমরা শ্রমিক, এখান থেকে কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাগজপত্র আনা আমাদের পক্ষে কি সম্ভব। আমাদের দাবি একটাই আগের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবার ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হোক। সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্যই নিরূপায় হয়ে রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’

লক্ষ্মীপুর সদরের বাসিন্দা প্রবাসী কর্মী শাহজাহান মিয়া সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। তার সঙ্গে আলাপকালে একই সুরে একই কথা বলেন আরও অসংখ্য প্রবাসীকর্মী।

শাহজাহান মিয়া গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের ছুটিতে দেশে ফেরেন। মার্চে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে পারেননি।

তিনি বলেন, ১১ মাস বেকার বসে আছি। কয়েক দিন ধরে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট কনফার্ম করার জন্য ছুটে আসছি। কিন্তু টিকিট পাচ্ছি না। ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সরকার ২৪ দিন ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও অনলাইনে গিয়ে চেক করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কোনো আলামত পাই না। বিদেশে কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠানোই কি আমাদের অপরাধ, সহজে সমস্যা সমাধানের জন্য তিন মাস ভিসা বাড়ানো হোক। তবেই সবাই ফিরে যেতে পারবেন।

সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকিটের দাবিতে আজ সৌদি প্রবাসীরা প্রতিদিনের মতো সকাল থেকে পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সংখ্যক প্রবাসীকর্মী যাদের আগে থেকে টোকেন দেয়া হয়েছিল তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় এবং টিকিট ইস্যু করে। কিন্তু যাদের ভিসার মেয়াদ দুদিন পর শেষ হচ্ছে তাদের ব্যাপারে কোনো তথ্যই দিচ্ছিল না।

দুপুর ১টার পর থেকেই প্রবাসীকর্মীরা রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। রাস্তায় নেমে আসেন শত শত প্রবাসীকর্মী। তারা সমস্বরে স্লোগান দেন ‘বাঁচলে সবাই বাঁচব আর মরলে সবাই মরব’। তিন মাস ভিসার মেয়াদ অটো বাড়ানো হোক। রাস্তা অবরোধের ফলে ব্যস্ততম এ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রবাসীকর্মীদের রাস্তা অবরোধ তুলে নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো অ্যাকশনে যেতে দেখা যায়নি। রাস্তা অবরোধের ফলে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নিবাসী মোশাররফ হোসেন নামে এক প্রবাসীকর্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দেশে ফিরে গত নয় মাস বেকার বসে বসে খাচ্ছি। আয়-রোজগার নেই। ৩০ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদও শেষ। ভিসার মেয়াদ ও টিকিটের ব্যবস্থা করতে এক সপ্তাহ ধরে এয়ারলাইন্স কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছি না। এখন আমার কী হবে?

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০)