শিতাংশু গুহ


অভিনেতা রিচার্ড বার্টন যখন এলিজাবেথ টেলর-কে বিয়ে করেন, তখন উপহার হিসাবে একটি ৭৪৭-বোয়িং দিয়েছিলেন। এটি পুরানো কাহিনী, সবার জানা। ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানী তার স্ত্রী’র জন্মদিনে একটি বিলাসবহুল প্লেন উপহার দেন্ বলে ক’বছর আগে একটি পত্রিকা সংবাদ দিয়েছিলো। সম্রাট শাহজাহান তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মমতাজের জন্যে ‘তাজমহল’ তৈরী করেছেন অথবা ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড প্রেমের জন্যে সিংহাসন ত্যাগের কাহিনী তো ইতিহাস। রাধাকৃষ্ণের প্রেম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। চন্ডিদাস-রজকিনী বা লাইলী-মজনু’র প্রেম কাহিনী আমরা জানি। এদের প্রেম-কাহিনী থেকে আমাদের দেশের লালমণিরহাটের রতিধর দেউটি গ্রামের দুলাল চন্দ্র রায়’ ৪৬ -এর প্রেমকাহিনী খুব তুচ্ছ নয়!!

ডেইলী ষ্টার ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২০ একটি চমকপ্রদ সংবাদ প্রকাশ করে বলেছে, লালমনিরহাটের কৃষক তাঁর স্ত্রী’র স্বপ্ন পুরনে তাঁকে একটি হাতি কিনে উপহার দিয়েছেন। হাতির দাম মাত্র সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা। শুধু হাতি হলে তো চলবে না, ‘মাহুত’ প্রয়োজন। তাই তিনি একজন মাহুত রেখেছেন, বেতন মাসিক ১৫হাজার। বলা হচ্ছে, তুলসী’র স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো, তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁকে একটি হাতি পুষতে হবে? তিনি শুধু যে হাতি কেনার স্বপ্ন দেখেছেন, তা নয়, বরং, হাতি, ঘোড়া, ছাগল ও হাঁস পোষার স্বপ্ন দেখেছেন। ছাগল, হাঁস গৃহস্থ বাড়ীতে থাকে, ঘোড়াও কদাচিৎ দেখা যায়। কিন্তু, হাতি!! স্বামী দুলাল বলেন, স্ত্রী’র শরীর ভালো যাচ্ছেনা দেখে তিনি ৩বিঘা সম্পত্তি বিক্রি করে এই রাজকীয় প্রাণী, হাতিটি কিনেছেন। তাঁর মোট জমি ছিলো, মোট ৪বিঘা। এখন আছে ১বিঘা। স্ত্রীর জন্যে স্বামী আর কি করতে পারেন!

দুলালের স্ত্রীর নাম তুলসী রানী। এদের দুই সন্তান। বিবাহিত কুঁড়ি বছর। রিচার্ড বার্টন বা আম্বানীর মতো ধনী নয় দুলাল রায়, কিন্তু তাঁর প্রেমের মূল্য বেশি। গরিব হয়েও তিনি স্ত্রীকে হাতি কিনে দিয়েছেন। হাতি কেনার পর দুলালের স্ত্রী তুলসী জানিয়েছেন, তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং বাড়িতে পূজা-অর্চণা করছেন। তিনি বলেছেন, স্বপ্নে যা বলা হয়েছে, তাই তিনি করছেন। এতো খরচ জেনে তুলসী বলেছেন, এই পরিবারের কোন সদস্য বা প্রাণী না খেয়ে মরবে না, ঈশ্বর সহায় আছেন। আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকবো। গ্রামের মানুষ চারিদিক থেকে হাতি দেখতে আসছে। আগেকার দিনে জমিদার বাড়িতে হাতি থাকতো। সম্ভবত: কৃষকের বাড়িতে হাতি, এই প্রথম। গ্রামবাসী মন্তব্য করছেন, হাতি পোষার খরচ অনেক, জানিনা দুলাল কতদিন এই খরচ বহন করতে পারবেন। গ্রামের দুই যুবক মাহুতের কাছে ট্রেনিং দিচ্ছেন, তিনি চলে গেলে এঁরা হাতিটি দেখবে।

দুলাল চন্দ্র রায় -এর নাম প্রেমিক হিসাবে ইতিহাসে ঠাঁই হবে কিনা জানিনা। তবে তিনি ভালো থাকুন, তার স্ত্রী তুলসী সুস্থ হয়ে উঠুন, আমরা তাই চাই। দুলালের কাহিনী ব্যাপক প্রচার পেলে কে-জানে হয়তো হাতিই এই দম্পতির কপাল খুলে দিতে পারে। বঙ্গদেশে ‘গরিবের দুয়ারে হাতি’র পা’ প্রবাদ যেমন আছে (এখানে গরিবের ঘরে ধনীর পদার্পন বোঝানো হয়েছে), তেমনি ‘হাতীর পাঁচ-পা দেখা’ প্রবাদও বেশ প্রচলিত, যার অর্থ হটাৎ বড়লোক হয়ে যাওয়া। দুলালের ভাগ্যে কি আছে, তা এখন দেখার অপেক্ষা। ডেইলি স্টারকে ধন্যবাদ, এমন একটি সংবাদ তুলে ধরার জন্যে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।