প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকান্ডের ঘটনায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী প্রচারণার অভিযোগ নতুন নয়। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামের দুই ধারণাকে উপজীব্য করেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। নব্য নাৎসীতন্ত্রের ব্যাপক উত্থান হয়েছে তিনি ক্ষমতায় আসার পর। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানেও উঠে আসে বিষয়টি। তবে পুলিশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা উস্কে দেওয়ার ঘটনায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ট্রাম্প।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে। 

বিতর্কের সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্পের কাছে জানতে চান যে, তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিন্দা জানাতে প্রস্তুত কিনা! উত্তরে ট্রাম্প বলেন,আমাকে তাদের নিন্দা জানাতে বলার আপনি কে? আমি তাদের থামতে বলতে চাই। তবে আমি যা দেখেছি তা হচ্ছে সেখানে যা ঘটেছে (বিক্ষোভকেন্দ্রিক সহিংসতা) তার প্রায় সবই বামপন্থীদের দ্বারা ঘটেছে, ডানপন্থীদের দ্বারা নয়। আমি শান্তি চাই।

সঞ্চালকের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আপনি কেন চাইছেন যে আমি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিন্দা জানাই! বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা কনজারভেটিভদের তৈরি কোনও ইস্যু নয় বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

মঙ্গলবারের বিতর্কে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সংগঠন প্রাউড বয়েজ-এর নামও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে নিজেদের সাংগঠনিক ইউনিফর্ম পরে ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয় সংগঠনটির সদস্যর।

উল্লেখ্য, মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানকে নির্বাচনি প্রচারণার অস্ত্র করেছিলেন ট্রাম্প। তার এই মহান আমেরিকা দিয়ে তিনি সেই কলম্বাসের আবিষ্কৃত আমেরিকাকে বুঝিয়ে থাকেন; যা শ্বেতাঙ্গ আাধিপত্যেরই নামান্তর। কালজয়ী ঐতিহাসিক হাওয়ার্ড জিন তার ‘পিপলস হিস্টরি অব আমেরিকা’য় লিখেছেন কিভাবে আদিবাসীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে এই কথিত আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য কায়েম করা হয়েছিল আর তার নাম দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা আবিষ্কার। সেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্থাপন করেছেন ট্রাম্প। তাদের মধ্যকার বিভক্তিকে সামনে আনতে চেয়েছেন। মেক্সিকোর সীমান্ত নয় কেবল, মানুষের মনের মধ্যে থাকা বিভক্তির দেয়ালকে উসকে দিতে চেয়েছেন তিনি।

২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে অর্ধশত মুসল্লিকে হত্যা করে উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের নতুন প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সে মুসলমানদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানায়। ওই হামলার পর এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ কোনও সমস্যা নয়। এবার নির্বাচনি বিতর্কেও শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের নিন্দা জানাতেও সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।

(বিপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০)