প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিসে মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ইউটাহ রাজ্যের সল্ট লেক সিটিতে পরস্পরের মুখোমুখি হন তারা। এ সময় করোনাভাইরাস ও বর্ণবাদের মতো নানা ইস্যুতে পরস্পরকে আক্রমণ করেন তারা। এর বাইরে দেড় ঘণ্টার বিতর্কে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, আইন শৃঙ্খলা, অভিবাসন, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের মতো বিষয়গুলো।মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

দুই প্রার্থীই মুখোমুখি বিতর্কে তাদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচী তুলে ধরেন। ট্রাম্পের রানিং মেট ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস সরকারের নানা ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন।

কমলা হ্যারিস বলেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাই ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তবে মাইক পেন্সের দাবি, করোনা নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্রে এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতো।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার ২২৪। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ৭৮৪ জনের। তবে মাইক পেন্সের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এ সংখ্যা হয়তো আরও বেশি হতে পারতো। ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই জনগণের জন্য করোনা টিকার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন মাইক পেন্স।

বিতর্ক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইউএসএ টুডে-র সাংবাদিক সুসান পেজ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স-এর কাছে জানতে চান, অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি কেন? এমনকি প্রতিবেশী কানাডার চেয়েও এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কারণ কী?

উত্তরে ট্রাম্পের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রধান মাইক পেন্স বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি দেশের জন্য যা করেছেন অন্য কোনও প্রেসিডেন্ট তা করেননি। এমনকি তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে সব ধরনের ভ্রমণ বাতিল করেছেন।

অন্যদিকে কমলা হ্যারিস বলেন, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসন জানতো। অথচ জেনেশুনেই তারা এটি ধামাচাপা দিয়েছে। দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

বিতর্কের প্রথম দিকে দুজনের মধ্যে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও সামগ্রিকভাবে ২৯শে সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের চেয়ে এটি অনেক বেশি শান্ত ছিল।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে তিনটি বিতর্ক হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিতর্কটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল বিতর্ক হিসেবে বর্ণনা করছেন অনেকে। আগামী ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে। মিয়ামিতে টাউন হল ফরম্যাটে এই বিতর্কটি হওয়ার কথা।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজেই টুইটার বার্তায় বলেন, তিনি ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিয়ামিতে অনুষ্ঠেয় বিতর্কের দিকে তাকিয়ে আছেন। বিতর্কটি দুর্দান্ত হবে বলে তার আশা। এদিন তার প্রচার শিবির থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরবর্তী বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প সশরীরে উপস্থিত থাকবেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি মনে করি, তাঁর (ট্রাম্প) যদি এখনো কোভিড থাকে, তাহলে আমাদের মধ্যে বিতর্ক হওয়া উচিত নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের খুব কঠোর নির্দেশিকা অনুসরণ করা উচিত। অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এটা একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা।’
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কথা জানান। এ অবস্থায় পরবর্তী বিতর্ক ও তাঁর নির্বাচনী প্রচার নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। তিন রাত হাসপাতালে কাটিয়ে পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন ট্রাম্প। ফলে এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়।

(বিপি/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০২০)