সৈয়দ নুহু উল আলম নবীন, আমতলী (বরগুনা) : আমন ক্ষেতের পোকা দমনে পাচিং পদ্ধতিতেই স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা। খরচ ছাড়াই ক্ষতিকর পোকার আক্রমন থেকে আমন ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি আমতলীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ পদ্ধতি প্রয়োগে কমেছে কীটনাশকের ব্যবহার। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। ধান উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ। জমিতে সার প্রয়োগের পর থেকেই ক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো , চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কীটনাশক প্রয়োগে না করে প্রাকৃতিক, সহজ, কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব পাচিং পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন কৃষকরা। ডেড ও জীবন্ত দুই ধরনের পাচিং পদ্ধতি রয়েছে।

কৃষকরা ওই দুই পদ্ধতিরই প্রয়োগ করছেন। এতে সুফলও পাচ্ছেন তারা। কৃষকরা জানান, ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে রোপা আমনের ক্ষেত রক্ষায় পাচিং পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি প্রয়োগে ধান ক্ষেতে বালাইনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। একর প্রতি ক্ষেতে ১০-১২ টি বাঁশের কাঞ্চি ও বিভিন্ন গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এ পাচিংয়ের (খুটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আমন ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। এতে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না, খবর কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়। ফলে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কাঞ্চি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পাচিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে। ধান ক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে পাখিরা।

আমতলী উপজেলার ঘটখালী গ্রামের সোবাহান মোল্লা বলেন, দুই একর আমনের ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে আমার কোন খরচ নেই। বাড়ীর গাছ থেকে ২০ টি ডাল কেটে ক্ষেতে পুতে দিয়েছি। ওই ডালে বসে পাখিরা ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। তিনি আরো বলেন, এতে যেমন আর্থিক উপকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের সুরক্ষা পাচ্ছি।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে আমনের ক্ষেত রক্ষায় পাচিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি।

উপজেলার মানিকঝুড়ি গ্রামের আবদুল মান্নান হাওলাদার ও ঘোপখালী গ্রামের সাইদুল রহমান বলেন, বিনা খরচে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষায় পাচিং একটি ভালো পদ্ধতি। আমরা ক্ষেতে বিভিন্ন গাছের ডাল পুতে দিয়েছি। ওই ডালে পাখি বসে আমন ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খাচ্ছে।

আমতলী উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, পাচিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে আমনের ক্ষেতে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না। উপজেলার সকল কৃষকের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আমতলী কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, উপজেলার সকল কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। এ পদ্ধতিটি কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব। কৃষকরা কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতিতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমতলী উপজেলায় ৬০ ভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে। অবশিষ্ট কৃষকদের এ পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি।

(এন/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০২০)