প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কয়েক দফা বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়েছে উঠতি আমন ধানের ক্ষেত। সেই সাথে নষ্ট হয়ে গেছে শাক-সবজী। এছাড়া উঁচু জমির আমন ক্ষেতগুলোতে ইঁদুর ও মাজরা পোকসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়েও আক্রান্ত হয়ে ক্ষেতগুলো নষ্ট হচ্ছে। বিষ কিংবা ওষুধ এবং ফাঁদ পেতেও কোন ভাল ফলাফল না আসায় কৃষকের মাথায় বজ্রপাত পড়েছে। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বর্তমান সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের মাঝে শাক্-সবজীর প্রনোদনা দিচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার(৮ অক্টোবর)দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চলগুলোতে উঠতি ঢ্যাশ আসা আমন ধানের ক্ষেত দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে থাকায় নুয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। চারিদিকে শুধু কদমাক্ত মাঠ পড়ে রয়েছে। দুর থেকে দেখে মনে হয় যেন আমন ক্ষেতগুলো কামারের ভাতীর আগুনের লাল আভা জ্বলছে।

এবারে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ৯৩০হেক্টর। অর্জিত হবে ১২হাজার ৫১০হেক্টর। কিন্তু পর পর মুসলধারে বৃষ্টি ও ৫বার বন্যার পানিতে কৃষকের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যেতে বসেছে।

উপজেলার রাজারহাট সদর ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মমিনুল ইসলাম(৩০), বাসারত আলী(৫০), বদিউজ্জামান যাদুর(৫৫), মনির মিয়া((৪৮), বাদশা মিয়া(৫০), সাইফুল ইসলাম(৫০), আবেদ আলী(৬৫), মিজানুর রহমান(৩৫), ফকরুল ইসলাম(৪৫), দৌলত মিয়া(৫১), জাহেদুল ইসলাম(৩৫)বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারনে সারাবিশ্বে মহামারী দেখা দিয়েছে। তার উপর প্রকৃতি বৈরিভাব করছে। এবার হামরা আমন ধানের ভাত মুখে উঠবে না।’ শুধু এই গ্রামটি নয়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলি নিম্নাঞ্চলের আমন ফসলের ক্ষেতের একই অবস্থা বিরাজ করছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানান, এবারে কয়েক দফার বন্যায় ১হাজার ১১৩হেক্টর আমন ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ হেক্টর ক্ষেত সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। আর ২শ ১ হেক্টর ক্ষেত আংশিক ক্ষতি হয়েছে। মোট ২শ ৮৪হেক্টর আমন ক্ষেত বিনষ্ট হয়। সেখান থেকে এক ছটাকও ধান উৎপন্ন হওয়ার সম্ভবনা নাই। এছাড়া আউশ আক্রান্ত ৩৫ হেক্টরের মধ্যে সম্পূর্ন ক্ষতি না হলেও আংশিক ক্ষতি ১৭দশমিক ৫০ হেক্টর। মাসকলাই আক্রান্ত ১ হেক্টরের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে দশমিক ৫০ হেক্টর। বর্তমান সরকার কৃষকের এই ক্ষতি পুষিতে নিতে দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার ১হাজার ২৫জন কৃষকের মাঝে ১৪প্রকার সল্প ও মধ্য মেয়াদী শাকসবজী বীজ প্রনোদনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি অফিস তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করছেন।

অপরদিকে উঁচু জমির আমন ক্ষেত ইঁদুর ও মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন রোগ বালাই আক্রান্ত করে নষ্ট করে দিয়েছে। কৃষকরা পাসিং পদ্ধতি, বিষ ফাঁদ দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারছে না। ফলে এবারের উঠতি আমন ক্ষেতের ধান কৃষকের গোলায় উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং পানির কারণে শাক সবজী নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে শাক সবজীর দাম উবর্ধমূখী হয়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে ক্রয় ক্ষমতা চলে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা সম্পা আক্তার বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে এ ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে। ইঁদুর নিধনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

(পিএস/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২০)