প্রবাস ডেস্ক : মসজিদের ভেতরে বারবার মারামারির ঘটনা ঘটলে মসজিদ বন্ধ করে দেবেন বলে সতর্ক করেছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসের প্রবাসী বাংলাদেশি পরিচালিত বায়তুল ইসলাম অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের কমিটি নিয়ে কয়েক দফা মারমারির ঘটনার পর পুলিশ এমন সতর্কতা জারি করেন। গত বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর উক্ত মসজিদের কমিটি নিয়ে দুই গ্রুপ মুসল্লিদের মাঝে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২ মুসল্লিকে গ্রেফতারের পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে। 

ব্রঙ্কসের প্রবাসী মুসল্লিরা জানান, গত বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজ শেষে উভয় পক্ষের কিছু লোকজন মসজিদে অবস্থান নেন। এই সময় স্থানীয় কমিউনিটির একজন অন্য গ্রুপের লোকজনকে প্রশ্ন করেন আপনারা মসজিদে কেন বসে রয়েছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লাঠিয়ে নিয়েও মারতে যায়। অনেকেই থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অশ্লীল গালাগাল করতে থাকে মসজিদেও ভেতরেই। গালাগাল দেখে কেউ বলবে না, এটা আল্লাহর ঘর। সেই পবিত্র আল্লাহর ঘরে কিভাবে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে। বড় কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায় দুই পক্ষ থেকেই পুলিশ কল কর হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষের কথা শুনে উভয়পক্ষের দুইজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তারা হলেন- আব্দুল ওয়াহাব এবং হেলাল উদ্দিন। জানা গেছে, ওই দিন রাতেই মুচলেকা নিয়ে দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মুসল্লিদের সূত্রে জানা গেছে, ব্রঙ্কসের বায়তুল ইসলাম অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে বর্তমানে একাধিক কমিটি ও ইমাম রয়েছেন। কমিটি নিয়ে ২০১৬ সালে দায়ের করা একটি মামলা এখনো আদালত বিচারাধীন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের কারণে মসজিদে বেশ কয়েকবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে তা তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। ২০১৬ সালে স্থানীয় লোকজন নিজেদের মতো করে সভা ডেকে কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সভাপতি করা হয় ফয়েজ আহমেদকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় আগাই জলিল তুহিনকে। অন্য দিকে আরেক গ্রুপের সভাপতি ছিলেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন। একটি কমিটি থাকার পরও জোর করে আরেকটি কমিটি করায় সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং মাওলানা ওবায়েদ বাদী হয়ে ২০১৬ সালে মামলা করেন। তাদের অভিযোগ একটি কমিটি থাকার পর আরেকটি কমিটি কিভাবে করা হয়? ওই কমিটি অবৈধ। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

১৯৯৫ সালে একটি বাড়ির বেইসমেন্ট থেকে এই মসজিদের যাত্রা শুরু। পরে দুই ফ্যামেলির একটি বাড়ি ক্রয় করা হয় এবং সেখানে মসজিদ স্থানান্তর করা হয়। যারা মসজিদটি ক্রয় করেন তাদের নেতৃত্বেই ছিলো মসজিদের কমিটি। ২০১৫ সালে মসজিদের মর্গেজ পরিশোধ করার পর থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। স্থানীয় লোকজন মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেন। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের কারণে মসজিদে অনেক সময়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অনেকবার পুলিশও এসেছে। ২০১৬ সালে স্থানীয় লোকজন নিজেদের মতো করে সভা ডেকে কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সভাপতি করা হয় ফয়েজ আহমেদকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় আগাই জলিল তুহিনকে। অন্য দিকে আরেক গ্রুপের সভাপতি ছিলেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন। একটি কমিটি থাকার পরও জোর করে আরেকটি কমিটি করায় সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং মাওলানা ওবায়েদ বাদী হয়ে ২০১৬ সালে মামলা করেন। তাদের অভিযোগ একটি কমিটি থাকার পর আরেকটি কমিটি কিভাবে করা হয়? ওই কমিটি অবৈধ। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

সূত্রটি উল্লেখ করেন, বিরোধের কারণেই এই মসজিদে দুইজন ইমাম রয়েছেন। একজন হচ্ছেন মাওলানা রহমতুল্লাহ অন্যজন হচ্ছেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। মাওলানা রহমতুল্লাহ তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়ান এবং মাওলানা মাহবুবুর রহমান জুমাসহ অন্যান্য দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। দুই ইমাম নিয়োগের বিষয়টিও স্থানীয় পুলিশ প্রিসেক্টকে জানানো হয়। পুলিশ প্রিসেক্ট থেকেই জানানো হয়, আপনারা যদি বারবার মারামারি করেন তাহলে এই মসজিদেই বন্ধ করে দেয়া হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কমিটিই দায়িত্ব পালন করছেন এবং দুটো কমিটিই ভাড়ার অর্থ তুলছেন।

এইভাবেই চলছিল মসজিদটি। দুই ইমামের সহযোগিতায় উভয়পক্ষই নিজেদের দখলদারিত্ব মনোভাব পরিহার করে মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। করোনাভাইরাসের সময় নিউইয়র্ক যখন লকডাউনে চলে যায়, তখন মসজিদটি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। আবার সীমিত আকারে খোলার পর মাস্ক পরে এবং সামাজিদ দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে মসজিদেও ভেতরে অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়। একটি সূত্র জানায়, পেন্ডামিকের আগ থেকেই উভয় গ্রুপের লোকজন নামাজ শেষ করার পরও মসজিদেও ভেতরে অবস্থান করতেন।

একপক্ষের অভিযোগ মুনার লোকজন মসজিদে মিটিং করতেন এবং কমিটিতে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যেও মুনার লোকজন রয়েছেন। অন্য দিকে আরেক পক্ষের অভিযোগ আমরাই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের যদি অন্য উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে আমরা নিজেদের নামেই মসজিদ ক্রয় করতে পারতাম। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে আমরা নাকি মুনা করি। আমাদের সরানোর জন্য এবং মসজিদ দখল করার জন্যই এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।

(বিপি/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০২০)