দিনাজপুর প্রতিনিধি : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)সহ বিভিন্ন নামের জঙ্গী সংগঠনের সক্রিয় জঙ্গীদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও আদালতের বিচারে এবং জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছে এ ধরনের ৩০ জন সক্রিয় জঙ্গীকে পুলিশ খুজছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পুনরায় বিভিন্ন নামে জঙ্গী সদস্যরা সক্রিয় হয়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালানোর চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্নস্থানে আইন শৃংখলা বাহিনী সক্রিয় জঙ্গী সদস্যদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। সেই লক্ষ্যেই সারা দেশে জঙ্গী সদস্যদের নাশকতা কার্যক্রম ঠেকাতে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণস্থান রেলওয়ে ষ্টেশন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী ডিগ্রি কলেজ, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সদর হাসপাতাল, পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কয়লা খনি এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, হিলিস্থল বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব সদস্যদের টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

গত ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট বেলা ১১ টায় সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুর শহরের জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা এক যোগে ১১টি স্থানে ১২টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। ওই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে ৮ জন সক্রিয় জঙ্গী সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (৩) আদালতে দীর্ঘসময় বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর ওই আদালতের বিচারক মোঃ গাজী রহমান ৮ জন আসামীর মধ্যে কারাগারে আটক ৭ জনকে খালাসের রায় দিয়ে পলাতক আসামী আফজাল আবেদিনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের কারাদন্ডের রায় প্রদান করেন। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আফজাল আবেদিন শহরের ক্ষেত্রিপাড়া মহল্লার জয়নাল আবেদিন মদনের পুত্র।

ঘটনার পর থেকেই সে পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে পলাতক রয়েছে। আফজাল ২০০১ সালে জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি পদে ছিল। গত ৯ বছরেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শহরের ক্ষেত্রিপাড়া মহল্লার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২ বছর পূর্বে আফজালের পিতা জয়নাল আবেদিন মারা যাওয়ার পর তার দাফন কার্য ও পরবর্তীতে কুলখানিতে এবং প্রায় সময়ই তার বাড়ীতে ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সাথে আফজালের উপস্থিতি দেখা গেছে।

অপরদিকে ওই মামলায় কারাগারে আটক ছিল এবং পরবর্তীতে বিচারে খালাস পাওয়া ৭ জনসহ জেলায় গ্রেফতার হওয়া ৩০ জন জঙ্গী সদস্য জেল হাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করে কোন হদিস পাচ্ছে না। এই চাঞ্চল্যকর মামলার খালাসপ্রাপ্ত ৭ জন হলো বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইল গ্রামের হাজী আব্দুল মজিদের পুত্র রায়হানুর রহমান ওরফে রেহান (৩৪), সদর উপজেলার রামনগর মহল্লার এহসান আলীর পুত্র আমিনুল ইসলাম ওরফে বিজি (৪৭), শিকদারহাট গ্রামের মকবুল হোসেনের পুত্র আব্দুর রশিদ বিন মকবুল (৩৩), খানপুর গ্রামের আফতাব উদ্দীনের পুত্র নজরুল ইসলাম (৩৪), বড়বন্দর এলাকার জয়েন উদ্দীন কেরানীর পুত্র আবু রাজিন মোঃ আব্দুল মতিন (৫০), মহব্বতপুর গ্রামের হাজী জসিমউদ্দীনের পুত্র তোজাম্মেল হোসেন ওরফে তোজা (৪৪) এবং বরগুনা জেলার বামনা থানার আমতলী গ্রামের ইয়ারত আলীর পুত্র রাজু মিয়া (৩০)। এই ৭ জন ২০১২ সালে ৩১ অক্টোবর আদালতের রায়ে খালাস পেয়ে জেল হাজত থেকে মুক্তি পেয়েছে।

অপরদিকে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িত এ ধরনের আরো ২৩ জন সদস্য জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আটক করে সন্ত্রাস দমন আইনে জেল হাজতে আটক ছিল। সকলেই জেল হাজত থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপন করেন। এদেরকে গ্রেফতারের জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী তৎপরতা চালালেও এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

(এটি/এইচআর/আগস্ট ১৭, ২০১৪)