স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই। একটা ছোট শিশু ছিল। কিন্তু সেই শিশুটাকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই। আমাদের প্রত্যেকটা শিশু লেখাপড়া শিখে আগামী দিনে এই দেশের কর্ণধার হবে। সুন্দরভাবে বাঁচবে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

রবিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত হন।

ছোটভাই শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশবের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন তার বড় বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

শহীদ শেখ রাসেলের শৈশবের স্কুলে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই এবং ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে, অন্তত তারা এইটুকু জানবে, এই টুকু শিখবে; একটা ছোট শিশু ছিল এই স্কুলে। কিন্তু সেই শিশুটাকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই।’

শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটা করার একটা উদ্দেশ্যই ছিল যে এদেশের শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা। দেশপ্রেমিক করা, দেশের সেবার করার মনোভাব যেন তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে। তারা যেন সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, সেদিকে চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি করা হয়েছিল। আজকে সারাদেশব্যাপী এই সংগঠনের অনেক ছেলেমেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অনেকে রাজনীতিতেও তারা যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। সেই ছোট্ট শিশু থেকে তারা এখন অনেকেই বড় হয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে।‘

শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। মানুষের সেবা করবে এবং নিজেদেরকে উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলবে। আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আমি জানি করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ। এটা সত্যি যেকোনো একজন শিশুর জন্য খুব কষ্টকর। কিন্তু হয়ত এই অস্বাভাবিক অবস্থা থাকবে না। তবু আমি তাদেরকে বলবো যে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।’

‘আমার একটাই লক্ষ্য যে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছে। দুই লাখ মা-বোন যে অবদান রেখেছে, সেকথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কবি সুকান্তের ভাষায় এটিই বলতে চাই, এই বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের আগে শহিদ শেখ রাসেলকে নিয়ে তৈরি এনিমেটেড ডকুমেন্টরি ‘বুবুর দেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন, শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই ‘শেখ রাসেল আমাদের আবেগ, আমাদের ভালবাসা’ এর মোড়ক উন্মোচন ও ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন; ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শহিদ শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন ও ‘শহিদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন; শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র অবলোকন ‘স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন।

শহীদ শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। ১১ বছরের ছোট রাসেল তখন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২০)