সিনিয়র রিপোর্টার, ঢাকা : কুষ্টিয়ার এক গৃহবধূকে ধর্ষণ ও তার সংসার তছনছ করার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তাকে সাসপেন্ড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ, তার আগের সংসার তছনছ করা ও বিয়ের নামে বিশ্বাসভঙ্গ-প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সাতক্ষীরা পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান ইনচার্জ (আইসি) রবীন মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারেক ফয়সালকে ফাঁড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এখন দায়িত্ব পালন করছি।’

কেন তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে জানতে চাইলে রবীন মন্ডল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা সিনিয়র স্যারদের সিদ্ধান্ত।’

সাসপেন্ড হওয়ার বিষয়ে তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ বলেন, ‘আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’ তবে এই সাসপেন্ড গুরুতর কিছু না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এতে আমার কিছুই হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সাংবাদিকরা নিউজ করছে। তারা সীমাকে দিয়ে এ সব করাচ্ছে।’

এই প্রতিবেদককে তারেক বলেন, ‘আমার চাকরি চলে যাক সেটাই তো আপনারা চাইছেন।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ একজন ধুরন্ধর পুলিশ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ, একাধিক নারীকে জিম্মি করে ধর্ষণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, কুষ্টিয়ার মেয়ে তানিয়া সুলতানা (সীমা)কে পথে বসিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি সীমার ২৭ বছরের সংসার তছনছ করে দিয়েছেন। কুষ্টিয়ার থানাপাড়ার ওই বাসাতেই ২০১৫ সালে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসেন থানার এসআই তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ। ওই বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকতেন তিনি। আর তৃতীয় তলায় থাকতেন ওই বাড়ির মালিক মোস্তফা কামালের স্ত্রী তানিয়া সুলতানা (সীমা)।

এই ধুরন্ধর পুলিশ কর্মকর্তা তারেক বিন আজিজের কারণে সীমার সেই সংসার আর টেকেনি। দুশ্চরিত্র এই পুলিশ কর্মকর্তার কারণে সীমার ঘর ভেঙেছে, সীমা হারিয়েছেন তার সম্ভ্রম। একদিন স্বামী বাসায় না থাকার সুযোগে ভাড়া পরিশোধের নামে সীমাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন কুষ্টিয়ার ওই সময়ের এসআই তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ। এরপর দিনের পর দিন ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন তারেক।

ধর্ষণের পর ওই নারীকে তারেক বলেন, ‘আমার কিছুই করতে পারবে না। পুলিশের থেকে বড় মাস্তান আর নেই।’
তারেকের হাত থেকে বাঁচতে একাধিকবার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান সীমা। কোনো উপায় না দেখে নিজের গা বাঁচাতে আগের সংসার থেকে ছাড়িয়ে সীমাকে বিয়ে করেন তারেক। কাবিননামায় ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। এই ১০ হাজার টাকা কাবিন ও ১০ হাজার উসুল দেখানো হয়।
কুষ্টিয়া থেকে সাতক্ষীরায় চাকরিতে প্রমোশন পাওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রী সীমাকে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। এই অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা এখন চাকরিতে বহাল আছেন। তানিয়া সুলতানা সীমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। সংসার করার নামেও তার সঙ্গে দিনের পর দিন প্রতারণা করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল পুলিশের চাকরি টিকিয়ে রাখা। পরে সুযোগ বুঝে সীমাকে ছেড়ে দেওয়া।

ঘরে লাবণী নামে প্রথম স্ত্রী থাকার পরও সীমার কাছে আগে প্রথম স্ত্রী থাকার কথা চাপা রাখেন। এমনকি বিয়ের কাবিননামায় তারেক বিন আজিজ উল্লেখ করেন তার আগে কোনো বিয়ে হয়নি।

ভিকটিম সীমার অভিযোগ, তাকে দিনের পর দিন ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক আমার স্বামীকে জিহাদি বই দিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দিতো। মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আমি ভয় পাওয়ার সুযোগে তারেক আমাকে জিম্মি করে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তারেক নিজের বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আমার সঙ্গে সংসার করার অভিনয় করে। ২০১৮ সালে বিয়ের সময় আমার সঙ্গে কথা ছিল ১০ লাখ টাকায় কাবিননামা হবে। কিন্তু কাজীর সঙ্গে হাত করে তারেক ১০ হাজার টাকা কাবিন করে। আমাকে গোপনে বিয়ে করে। পরিবারের কাউকেও বিষয়টি জানাতে দেয়নি। এমনকি বাইরে কোথাও তারেক আমাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়নি।’

‘ইজ্জত হারানোর পরও আমি তারেককে বলতাম আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারেক উল্টো আমাকে জিম্মি করে ফেলে। মানসম্মানের ভয়ে আমি চুপ থাকতাম আর অন্ধকার ঘরে কাঁদতাম’- যোগ করেন সীমা।

সীমা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণায় শিকার হয়েছেন। এরপরও সবকিছু জেনে সংসার করতে চান তারেকের সঙ্গে। তারেকের আগের স্ত্রীর কথা জেনেও বছর দুয়েক সংসার শুরু করেন সীমা। একসময় সাতক্ষীরা সদর পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি হয়ে যান তারেক। এরপর থেকে বদলে যান তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ। সীমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে এ বছরের ২০ এপ্রিল সীমাকে তালাকও দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা তারেক ফয়সাল ইবনে আজিজ।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২০)