সিনিয়র রিপোর্টার: রাজধানীর উত্তর আদাবরে নির্মাণ বিধিমালা না মেনে নিজেদের খুশিমতো ১০ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছে এস বিল্ডার্স। এক্ষেত্রে উৎকোচ নিয়ে ওই ভবন তৈরিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে এস বিল্ডার্স ওই ভবন নির্মাণ করছে। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, তারা রাজউককেও তোয়াক্কা করছে না।

ওই ভবন নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলেও গত দুই মাসে রাজউক দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই ভবনের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর সময় দফায় দফায় রাজউককে ঘুষ দিয়েছে এস বিল্ডার্স। আর এই ঘুষ পেয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা এস বিল্ডার্সকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে। এর ফলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভবন নির্মাণের সাহস পেয়েছে এস বিল্ডার্স। আর এস বিল্ডার্সও ভাবছে তাদের ভবনের কিছু হবে না বা রাজউক কোনো ব্যবস্থা নেবে না।

বিধি না মেনে ভবন নির্মাণ করায় এস বিল্ডার্স আলোচনায় এসেছে। তাদের প্রতি ক্ষোভ জানানো শুরু করেছেন স্থানীয়রা। বাড়িটির নির্মাণকাজের অসঙ্গতি নিয়ে এর আগে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর রাজউকের মহাখালীর জোনাল অফিস থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ভবনটি পরিদর্শনে যান রাজউকের মাঠ পরিদর্শক সেলিম। তবে সেলিম এখন অন্য এলাকায় বদলি হয়েছেন। এখন মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় ইন্সপেক্টর মো. সোলাইমান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজউক নীরব থাকায় ইমারত বিধিমালা না মেনে এস বিল্ডার্স নামে প্রতিষ্ঠানটি ১০ তলা ভবন গড়ে তুলেছে। মাঠপর্যায়ে রাজউকের পরিদর্শক থাকলেও ঠিকমতো নির্মাণকাজ মনিটরিং না হওয়ার সুযোগ নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর রাজউক বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ওই ভবনের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিবুর রহমান ও তার ভাই-বোনেরা এ প্লটটির মালিক। ৭ কাঠা জমিটি তারা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এস বিল্ডার্সকে দেন। কিন্তু এস বিল্ডার্স তার ব্যবসায়িক চিন্তা মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের সময় কোনো জায়গা ছাড়েনি।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ অনুযায়ী নিকটবর্তী রাস্তা থেকে ভবনের দূরত্ব হতে হবে ৪ দশমিক ৫ মিটার। সীমানা সংলগ্ন রাস্তা থেকে ভবনের দূরত্ব হতে হবে ১ দশমিক ৫ মিটার বা পাঁচ ফুট। এক্ষেত্রে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের বেলায় নিয়ম মানা হয়নি। বিধি অনুযায়ী ভবনের প্রাচীর ১ দশমিক ৭৫ মিটার রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এছাড়া ভবনের দুই পাশে ও পেছনে মাত্র এক ফুট করে জায়গা ছাড়া হয়েছে।

নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ৭ কাঠা জায়গাতে সামনে দেড় মিটার, পেছনে দুই মিটার ও পাশে ১ দশমিক ২৫ মিটার জায়গা খালি রাখার কথা। বিধি অনুযায়ী সেট ব্যাকের মধ্যে ব্যালকনি করা যাবে না উল্লেখ থাকলেও ওই ভবনে সেট ব্যাকের মধ্যে ব্যালকনি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিম থেকে ডেভিয়েশন বাড়ানো হয়েছে অন্তত পাঁচ ফুট। মোট কথা ভবন নির্মাণে প্রতি ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় রাজউকের কাছ থেকে বসবাসের অনুমতি না নিয়েই এস বিল্ডার্স ফ্ল্যাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে কোনো ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী ওই ভবনে বসবাস করতে হলে রাজউকের অনুমতি লাগে। অনুমতি ছাড়া বসবাস করলে নির্ধারিত ফি’র পাশাপাশি ১০ গুন পর্যন্ত জরিমানার
বিধান রয়েছে।

রাজউককে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এস বিল্ডার্সের ডিরেক্টর সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘কিছু না কিছু খরচাপাতি তো হয়েছেই। আর এ সব কাজ করতে হলে রাজউককে ম্যানেজ করতে হয় সেটা নিশ্চয় জানেন। ভবনের কাজ শুরুর সময় রাজউককে আমরা কিছু দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো রাজউকের কেউ দায় নেবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমাদের কিছু ভুল-ত্রুটি আছে। আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করছি।’

এস বিল্ডার্সের অবৈধ ভবন সম্পর্কে রাজউকের পরিদর্শক সোলাইমান বলেন, ‘আমরা ওই ভবন বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ভবনটি এরইমধ্যে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছি। নানা অসঙ্গতি পেয়েছি। ওই ভবনে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাজউকের মহাখালী জোন-৩ এর অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ নুর আলম বলেন, ‘কীভাবে বিধি না মেনে ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আমরা সেই বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব। বিধি না মেনে ভবন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

(ওএস/পিএস/১৮ অক্টোবর, ২০২০)