সিনিয়র রিপোর্টার: ইমারত বিধিমালা নির্মাণ অনুসরণ তো দূরের কথা ভবন নির্মাণের বেলায় আশেপাশে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়েনি ফাইভ হোল্ডিংস লিমিটেড। রাজধানীর সলিমুল্লাহ রোডে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই বিল্ডিং গড়ে তুলছে। নামেমাত্র সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও তাতে সব তথ্য দেওয়া নেই।

নির্মাণ সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী এই ভবনটির অনুমোদন স্মারক নং: ২৫.৩৯.০০০০.০৯৮.৩৩১২৫৫-১২৮৫। তারিখ: ২২.১১.২০১৮। প্লটটির মালিক মুসলিমা আক্তার গং, প্লটটির ঠিকানা: ১১/১৫, সলিমুল্লাহ রোড।
কিন্তু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তার সাইনবোর্ডে বেজমেন্ট কিংবা ভবনটি কয় তলা হবে সে বিষয়ে তথ্য লুকিয়েছে। এ ছাড়া সাইনবোর্ডে প্রতি তলার আয়তন ৮৪ বর্গমিটার করা হলেও তা ডেভিয়েশন বাড়িয়ে করা হয়েছে অন্তত ৯০ বর্গমিটার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাইভ হোল্ডিংস লিমিটেড ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। এরইমধ্যে রং করা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করে সটকে পড়বে নামসর্বস্ব এই কোম্পানিটি।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ভবনের দুইপাশে কোনো জায়গা ছাড়া হয়নি। পেছনেও জায়গা পর্যাপ্ত ছাড়া হয়নি। এছাড়া নির্মাণ বিধিমালার তোয়াক্কা না করে বিম থেকে ডেভিয়েশন বাড়ানো হয়েছে অন্তত তিন ফুট। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে নকশার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। জয়েন্ট কোয়ার্টারের দোহাই দিয়ে প্লটের পুরো জায়গায় নির্মাণকাজে নিয়েছে ফাইভ হোল্ডিংস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাইভ হোল্ডিংস লিমিটেডের হিসাব শাখার কর্মকর্তা মাসুম বলেন, ‘আপনি আমাদের অফিসে আসুন। এমডির সঙ্গে কথা বলুন। তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন।’ কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ইকবাল রোডের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার অফিস সহায়ক মনির বলেন, ‘স্যাররা কেউ নেই। আপনি ভিজিটিং কার্ড নিয়ে যান।’
ফাইভ হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইউসুফ তালুকদারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এটা জয়েন্ট কোয়ার্টার করেছি। রাজউকের সব নিয়ম মেনেই এই ভবন করা হচ্ছে। আমি ভবন করেছি এটা রাজউক দেখবে, আপনাদের কী? এখানে হাউজিং আছে, রাজউক আছে, আপনারা কারা?’
এ সময় ফাইভ হোল্ডিংস এর এমডি নিজেকে বাংলাভিশনের সাংবাদিক তৈমুর রশীদের বড় ভাই পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই তৈমুর রশীদ বাংলাভিশনে চাকরি করেন। আপনি কি তাকে চেনেন? তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেনাজানা আছে। আমার ছোটভাই জানলে আপনাদের সমস্যায় পড়তে হবে।’
তবে বাংলাভিশনের সাংবাদিক তৈমুর রশীদ বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি তার উল্টোদিকে ফাইভ হোল্ডিংস এর এমডি থাকতেন। সেই হিসেবে তার সঙ্গে পরিচয় আছে। তাকে আমি যে চিনি না এটা বললে ভুল হবে। তবে তিনি আমার কোনো আত্মীয়স্বজন হন না।’
‘আপনরা কোনো অসঙ্গতি পেলে আপনাদের মতো নিউজ করতে পারেন’ বলেন তৈমুর রশীদ।
এ ভাবে নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে রাজউকের জোন-৩ এর সহকারী অর্থরাইজড অফিসার রঙ্গন মণ্ডল বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী জায়গা ছাড়তে হবে ও নির্মাণ বিধিমালা পুরোপুরি মানতে হবে। জয়েন্ট কোর্টারের বিষয়টি আইনে সাপোর্ট করে না। তাই এরকম কোনো ভবন আমাদের চোখে পড়লে আমরা বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

(ওএস/পিএস/১৮ অক্টোবর, ২০২০)