সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা হওয়ার পর পুরনো হিসাব-নিকাশ সংশোধন করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের মহাকালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বিরাজ। তার এ কাজে সহায়তা করছেন বদলি হয়ে যাওয়া আগের সচিব মোস্তফা কামাল ও বর্তমান সচিব আব্দুল বাতেন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগ থেকে নিজের গা বাঁচাতে বদলি হয়ে যাওয়া সচিব মোস্তফা কামালকে গত শনিবার (১০ অক্টোবর) ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনেন বিরাজ চেয়ারম্যান। এরপর সেখানে বর্তমান সচিব আব্দুল বাতেনের উপস্থিতিতে হিসাব-নিকাশ আংশিক সংশোধন করেন। সূত্র জানিয়েছে, বিরাজ চেয়ারম্যান তার বাসাতেও সচিবদের ডেকে পুরনো হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক করছেন।

হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক করার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মোস্তফা বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদে এমনিতেই গিয়েছিলাম। বর্তমান সচিব বাতেন ফোন দিয়েছিল তাই দেখা করতে গিয়েছিলাম।

আপনি শনিবার বন্ধের দিন হিসাব-নিকাশ ঠিক করতে গিয়েছিলেন কেন প্রশ্ন করলে মোস্তফা বলেন, ‘বিরাজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাই বদলি হয়ে আমি অন্য ইউনিয়নে গিয়েছি। হিসাব-নিকাশ সংশোধন করার প্রশ্নই আসে না।

এখানে উল্লেখ্য যে, ইউনিয়ন পরিষদের বিরাজ চেয়ারম্যান ও সচিব মোস্তফার যোগসাজশে আর্থিক লুটপাট সংঘটিত হয়। আর্থিক অনিয়মের সহযোগিতা করেন আগের সচিব মোস্তফা এমন অভিযোগও রয়েছে।

হিসাব-নিকাশ সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাকালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুল বাতেন বলেন, ‘মোস্তফা এসেছিল। কিন্তু তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। সে কেন এসেছিল আমি জানি না।’

বাতেন আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যদি কোনো অন্যায় করে তবে আমিও চাইব তার যেন জেল হয়।’

হিসাব-নিকাশ সংশোধন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন কেন জানতে চাইলে বিরাজ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’ এরপর একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।’

উল্লেখ্য যে কমিশন ছাড়া ইউপি মেম্বারদের কাজ না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রিয়াজুল ইসলাম বিরাজের বিরুদ্ধে। প্রতি কাজের বিপরীতে তাকে কমিশন দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগও রয়েছে বিরাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাগজকলমে রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। রহমান এন্টারপ্রাইজের নামে এই টাকা তুলে নেওয়া হয়। অথচ রহমান এন্টারপ্রাইজ কাজই করেনি। ওই কাজের বিপরীতে কোনো ভাউচার কিংবা মাস্টার রোলও নেই।

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয়ের নামে এই অর্থ খাতে-বেখাতে লুটপাট করেছেন। গত তিন বছরে ইউনিয়ন পরিষদ ২০ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ ও সরকারি বরাদ্দ থেকে ইনকাম করে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই অর্থ ভাউচার বাদেই খরচ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খরচ দেখানো হয়েছে।

বিরাজ চেয়ারম্যান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয় দেখাননি। ওই অর্থবছরের আয়-ব্যয় না দেখিয়ে সেখান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ সালে আয়-ব্যয় দেখানো হিসাবে গড়মিল উঠে এসেছে। যেখানে অধিকাংশ হিসাবে কোনো ভাউচার নেই। ভাউচার বাদেই নানা খাত-উপখাতে চেয়ারম্যান ও সচিব মোস্তফার যোগসাজশে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করা ১ শতাংশ এর মোট বরাদ্দ ১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এই টাকা ১১টি প্রকল্পের অনুকূলে ছাড় করা হয়। কিন্তু ১১ টি প্রকল্পে ব্যয় সংক্রান্ত কোনো ভাউচার পাওয়া যাযনি। প্রকল্পের অনুকূলে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়া হয়নি। যা ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল পরিপন্থী।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে কর আদায় করা হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ১৭০ টাকা। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ কর আদায় কমিশনে ব্যয় হওয়ার কথা ৮৫ হাজার ৬৭৫ টাকা। অথচ কর আদায় কমিশনে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩২ টাকা। অথচ হিসাব থেকে তিনি ৫৪ হাজার টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছেন।

(ওএস/পিএস/১৮ অক্টোবর, ২০২০)