সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও বেতনা নদীর  তীরে বেড়ি বাঁধের নয়টি  স্থানে  ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি ও জোয়ারের তীব্র স্রোতে নদীর তীরবর্তী উপজেলার ১২টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে খোলপেটুয়া নদীর জেলেখালী ও দয়ারঘাট এলাকায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে আশাশুনি শহর রক্ষা বাঁধ। এলাকাবাসির আশঙ্কা বেড়ি বাঁধগুলো সংস্কার করা না হলে যে কোন মুহুর্তে নদীর পানিতে ভেসে যেতে পারে এ উপজেলার বিস্তার্ণ এলাকা ।

এদিকে আশাশুনির তিনটি নদীর বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি ওইসব এলাকা পরিদর্শণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। তিনি অবিলম্বে ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদীয় আসন সাতক্ষীরা- ৩ এর সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক রবিবার বিকেলে আশাশুনি উপজেলার ভাঙন কবলিত কয়েকটি স্থান পরিদর্শণ শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের নূরে আলম ছিদ্দিকী ও বিছট গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রশীদ জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে ভাঙন শুর হয় আশাশুনির শহর রক্ষা বেড়ি বাঁধসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাউবো’র বেড়ি বাঁধগুলো। চলতি বর্ষা মৌসুমে খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও বেতনা নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর (৪,৭ও২) নং পোল্ডারের আওতাধীন আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, চাকলা, বিছট, কোলা, হাজারাখালী,ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, কেয়ারগাতি, চন্ডিতলা ও বুধহাটার তেঁতুলতলা গ্রামের বেঁড়িবাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে খোলপেটুয়া নদীর জেলেখালী, দয়ারঘাট ও কোলা এলাকায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। যে কোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে এ উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসি। ইতিমধ্যে গত কয়েকদিনে জোয়ারের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ি বাঁধ উপচে পানি কয়েকটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কয়েকটি ভাঙ্গন পয়েন্ট মেরামতের চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। ক্রমশঃ ভাঙ্গন কবলিত স্থানের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এ জনপদের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

প্রতাপনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, চাকলায় বেড়ি বাঁধের দু’ হাজার ৪০০ ফুট এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙ্গন । ইতিমধ্যে অধিকাংশ স্থানে বাঁধের অনেক অংশ কপোতাক্ষ নদে ভেঙ্গে পড়েছে। গত তিনদিনে তিনটি স্থানে ২০ থেকে ২৫ হাত এলাকার বাঁধ উপচে ভিতরে পানি ঢুকেছে।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গনের তীব্রতা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা- বিভাগ ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম সোমবার সকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, আশাশুনি উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত নয়টি পয়েন্টে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ সংষ্কারের কাজ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্র এর অনমুতি পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

(আরকে/এইচআর/আগস্ট ১৮, ২০১৪)