রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : ভরা বর্ষার মৌসুমেও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হাট-বাজারে দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ করে দেখা গেছে, এসব হাট-বাজারে বিক্রেতারা বিভিন্ন মৎস্য খামারে চাষ করা মাছ এনে বিক্রি করছেন। তারা জানান, জেলেরা নদী, খাল-বিলে জাল ফেলে দেশি মাছের দেখা পাচ্ছেন না। বছর তিনেক আগেও বর্ষা মৌসুমে হাট-বাজারগুলোতে দেশি মাছের ছড়াছড়ি ছিল। তাছাড়া এখন দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কিছু জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারের নামে নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর ‘গুষ্টিমারা জাল’ (স্থানীয় নাম)। এ জাল ব্যবহার করে দেশি মাছ ছোট অবস্থায় ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘লোকবল না থাকায় দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলায় নদী, খাল, বিল উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ হচ্ছে আট হাজার হেক্টরেরও বেশি। এগুলোতে একসময় দেশি মাছের ভান্ডার ছিল। উত্তর চরবংশী, দক্ষিন চরবংশী, খাসেরহাট, আমতলা, চরকাছিয়া, আলেকজেন্ডার, হাজারি বিলসহ প্রায় ৪৭টির মতো বিল রয়েছে। এসব বিল বা জলাশয় থেকে সুস্বাদু দেশি মাছের জোগান পাওয়া যেত। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে পুঁটি, টেংরা, পাবদা, কই, টাকি, শোল, রানী, মলা, মেনি, চাপিলা, গোলসা, বালিয়া, কালিবাউস, দেশি রুই, কাতলা ইত্যাদি।

বর্তমানে রায়পুরের বাজারগুলোতে বিক্রেতারা চাষের পাঙাশ, তেলাপিয়া, হাইব্রিড রুই, বিগহেড, চাইনিজ পুঁটি প্রভৃতি বিদেশি জাতের মাছ এবং সামান্য কিছু জাটকা নিয়ে বসে থাকছেন। দামও হাঁকছেন খুব চড়া। সাধারণ ক্রেতাদের বেশির ভাগকেই নদীর লাল দগরি (চেউয়া) মাছ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানিয়েছেন।

রায়পুর পৌরশহরের পুরানবাজার, নতুনবাজার এলাকার মাছের বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা ছোট আকারের দেশীয় মাছ এনে বিক্রি করছেন। মাছ ক্রেতা রাসেদ বলেন, বাজারে ঢুকেই দেশি মাছের খোঁজ করি। না পেয়ে বাধ্য হই মৎস্য খামারের স্বাদহীন মাছ কিনতে। বিক্রেতা মো. সাদ্দাম বলেন, ‘খামারের মাছ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। সারা দিন নদীতে খরা জাল পেতে রেখেও দেশি মাছের দেখা পাওয়া যায় না।

স্থানীয় আড়তদার মফিজুর রহমান ও কৃষ্ণ বর্মণসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মেঘনা উপকূল এলাকায় এখন দেশি মাছের আকাল। রামগঞ্জ উপজেলা থেকে কিছু দেশি মাছ আড়তে এলেও উচ্চমূল্যের কারণে তা সাধারণের নাগালের বাইরে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র চাঁদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার মাছের বংশ বৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্ষায় মৎস্য আইন মেনে চলতে কড়াকড়ি আরোপ করলে দেশি প্রজাতির মাছের দেখা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আলম বলেন, ‘যেসব জলাশয়ে সরকারি খাসজমি রয়েছে, মৎস্য কার্যালয় সেখানে দেশি জাতের মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে পারে।’

(এমআরএস/এইচআর/আগস্ট ১৮, ২০১৪)