শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরসহ দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেই।আর এ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে পৌর নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দিনাজপুরে দৌড়-ঝাপ শুরু করেছে,সম্ভাব্য প্রার্থীরা।দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং-গ্রুপিং চলছে পুরোদমে।সম্ভাব্য প্রাার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মাঠে-ময়দানে আগাম প্রচারে সরব হয়ে উঠেছেন।অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

সবচেয়ে বেশি তোড়জোড় চলছে,ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে। মেয়র পদে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। মনোনয়ন পেতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও চালাচ্ছেন তোড়জোড়। গত নির্বাচনে জেলার ২/৩ টি পৌরসভায় জামায়াত প্রাার্থী দিলেও এবার ব্যতিক্রম। পুলিশি হয়রানি আর মামলার কারণে কেউ মাঠে নামার সাহসই পাচ্ছেন না এবার।

ডিসেম্বরই দিনাজপুর সদর, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর এই পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এই প্রতিবেদক শাহ্ আলম শাহী’কে জানিয়েছে, ইসি’র একটি সূত্র। দিনাজপুরসহ দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সম্প্রতি ইসি’র কমিশন বৈঠক থেকে নির্দেশনায় দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ অর্থ্যাৎ ৩০ ডিসেম্বর সম্ভাব্য ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করাও হয়েছে। একই দিনে এবং ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের চিন্তা চক করছে ইসি। তবে,চুড়ান্ত তালিকার পরির্বতন আসতে পারে বলে জানিয়েছে,ইসি’র ওই সূত্রটি। এজন্যে ৪০ থেকে ৪৫দিন হাতে রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

ডিসেম্বরে দিনাজপুর জেলায় পাঁচটি পৌরসভার সম্ভাব্য নির্বাচন এগিয়ে এলেও ১৫০ বছরের বেশি পুরোনো দিনাজপুর পৌরসভা নির্বাচনকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ,এটি আয়তনে যেমন বড়, তেমনি জেলার রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ হয় এখান থেকে। আবার এই পৌরসভাটি সিটি করপোরেশন হবে, এমন আলোচনাও চলছে শহরে।
ব্রিটিশ আমলে ১৮৬৯ সালে এই পৌরসভা গঠিত হয়। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। এর মধ্যে ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭’শ ৯০ জন। ভোটারদের মধ্যে ৫৯ হাজার ৬’শ ৯৭ জনই নারী। এলাকার সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি বললেন, এই নারী ভোটাররাই প্রার্থীদের জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবেন।

বিএনপি’র দখলে এই পৌরসভা থাকলেও ২০ অক্টোবর সদর উপজেলার শূণ্য পদে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একাংশের প্রার্থী তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা মো,রবিউল ইসলাম সোহাগ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। দু’টি গ্রুপে ক্ষমতাসীন দলের দু’জন প্রার্থী থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতেও ৫২ হাজারেরও বেশি ভোট পড়েছে, এই সোহাগের চশমা প্রতীকে। এতে সৃষ্টি হয়েছে,নতুন ইতিহাস। এ কারণে,এবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে পাল্টে গেছে, এবার দিনাজপুর পৌরসভার ভোটের হিসেব-নিকেষ।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে,এবার। আলোচনায় আছেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রীড়াবিদ মিজানুল রহমান বাবু পাটোয়ারী, সাবেক মেয়র সফিকুল হক ছুটু, পৌর কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান নওশাদ, সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল।

এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ফয়সাল হাবিব সুমন, শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম.খালেকুজ্জামান রাজু, আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেন বাবুসহ অনেকেই। আরেকজনের নাম আগে ভাগে থাকলেও কোতয়ালী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন এখন রাজনৈতিক রোষানলে বাইরেই অবস্থান করছেন।

বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন, বর্তামন মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। দ্বিতীয় দফা মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও সাবেক ছাত্র নেতা বিএনপি রাজনীতির অগ্র সৈনিক শাহীন খান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল এবার মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকার দীর্ঘ প্রতিজ্ঞ বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সাবেক কাউন্সিলর আলতাফ হোসেন।
তবে, কেন্দ্র থেকে পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা না আসলেও দলের অনেকেই মনোনয়নের আশায় মাঠে সরব হয়েছেন।

শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিরল পদে ১০ থেকে ১৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২০)