এনায়েত রেজা


ফেসবুকের কল্যাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক জিয়া রহমানের একটি টকশোর খন্ডিত অংশ দেখালাম। স্লামালাকুম বনাম আসসালামু আলাইকুম ও খোদা হাফেজ বনাম আল্লাহ হাফেজ নিয়ে কথা বলা কাটপিস ভিডিওটি এখন বেশ উষ্ম করেছে প্রতিক্রিয়াশীল সমাজকে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষ। মানুষের কাস্টম, কালচার, ধর্মে অগাধ শ্রদ্ধা। মানুষের পোশাক, দাঁড়ি, টুপি, হ্যাট, পৈতা, সম্ভাষণ দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন সংগত নয় বলেই বিশ্বাস করি। মানুষকে মূল্যায়নের জায়গা তাঁর বোধে, চিন্তায়, প্রকাশে; মানবতা, সৃজনশীলতা, মনুষ্যত্বে।

অধ্যাপক জিয়া রহমান নিন্দা জানানোর মতো কী বলেছেন খুঁজে পেলাম না। উনি ইসলামের বিরুদ্ধে বলেন নাই, ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ, বা কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধেও বলেন নাই। অধ্যাপক জিয়া রহমান ব্যক্তিগত জীবনে একজন প্রাকটিসিং মুসলিম। দুই মাস আগে তাঁর ভ্রাতা বিয়োগের পর যখন গভীর শোকে শোকাহত তখন বিষয়টি লক্ষ্য করেছি।

তিনি এদেশে পবিত্র ধর্ম ইসলামের যে পলিটিসাইজেশন অশুভ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটা সম্পর্কে বলেছেন। এই পলিটিসাইজেশন তো এমনিতেই হচ্ছে না। বিভিন্ন গ্রুপ সচেতনভাবে, পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে পলিটিসাইজ করার চেষ্টারত। তারা ফল পাওয়াও যাচ্ছে। জীবনযাপনে ইসলাম আর রাজনীতিতে ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। পেট্রো-ডলারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সালাফিজমের বৈশ্বিক তাপ বাংলাদেশের উপরে স্বাভাবিকরূপেই বেশি পড়ার কথা। বৈশ্বিক উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ- জঙ্গীবাদের ব্রিডিং স্পট আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বাংলাদেশ ভালনারেবল।

সম্ভাষণের রীতি ও সংস্কৃতি অপরিবর্তনীয় নয়। সময়ের সাথে বিবর্তন, পরিবর্তন ঘটবেই। যেটা সাদা চোখেই দেখা যায়। তবে পরিবর্তন সবসময় নির্দোষ নয়।

এদেশের সুফি ইসলাম, সহনশীলতার ইসলাম, মানবতাবাদের ইসলাম কী করে সালাফিজমে কনভার্ট করার অপচেষ্টা চলছে খেয়াল না রাখলেই নয়। কারণ আমাদের লাভের জন্যই বাঙালি মুসলমানের ইসলাম ধরে রাখা দরকার। এর বাইরে উগ্র বাদের সকল পথ ইসলামের জন্য, বাঙালির জন্য, জাতির জন্য বিপদের কারণ। হলি আর্টিজান হামলা, ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, রমনার বটমূলে হামলা, ২১ আগস্টের বোমা হামলা প্রভৃতির বিচার যথেষ্ট নয় শুধু, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বাইরেও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন উদঘাটন করতে হবে।

অধ্যাপক জিয়া রহমান সমাজ বিজ্ঞান ও অপরাধ বিজ্ঞানের একজন ভালো স্কলার বলেই তাঁর অভিজ্ঞতা ও গবেষণা থেকে সম্ভাষণ সংস্কৃতির পলিটিসাইজড পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সংস্কৃতির খোঁজখবর রাখলে, বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ বৈশ্বিক উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদের স্রোতের দিকেই যাচ্ছে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এই অশুভ পরিবর্তনের জন্য শুধু ধর্মের অপব্যাখ্যা, ধর্মীয় বিচ্যুতি, গ্লোবাল পলিটিক্স দায়ী নয়; অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও বিশৃঙ্খলা সমানভাবে দায়ী। এগুলো ক্রিড়ানক শক্তিগুলোর সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার সিস্টেম হিসেবে কাজ করছে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।