স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তাই তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় একটা বক্তব্যে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পর কোনো দেশ কোনো যুগে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে নাই, যা আমরা করছি। আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও বিশ্বাস করি। এই জন্য আপনাদের কোনো কাজে কখনো কোনো রকম হস্তক্ষেপ করি নাই। বিপ্লবের পর ছয় মাসের মধ্যে আপনারা যতখানি স্বাধীনতা পেয়েছেন ততখানি স্বাধীনতা এদের পূর্বে কেউ পায় নাই। আমার সরকার সংবাদ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে এমন নজির কেউ দিতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করার পর বলেন, কথাগুলো সত্য। আপনারা জানেন, অনেকেই এখন অল্প বয়সের, তখন জন্মই হয়নি। যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে ২৫ মার্চ। তখন কিন্তু অনেক পত্রিকা তারা পুড়িয়ে দেয়। খুব বেশি পত্রিকা আমাদের ছিল না। প্রত্যেকটা সংবাদপত্র অফিসে তারা হামলা চালায়। স্বাধীনতার পর এমন একটা অবস্থা হয় এই সব সংবাদপত্র চালানো তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন, সরকারি বেতন সবাই পেতেন, সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাকে হয়তো অন্যভাবে দেখা হয়েছে, উনি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছেন! কারণ তখন কারো বেতন দেয়ার মতো বা সাংবাদিক চালানোর মতো কোনো ক্ষমতা ছিল না। আর্থিক সেই অবস্থাটা ছিল না। সেই দায়িত্বটাও তিনি নিয়েছিলেন এবং তখন সবাইকেই সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, দুভার্গ্য হলো আমার নিজের দেখা, যারা সরকারি চাকরি পেয়েছিল তারাই বেশি সমালোচনা করত। যে কারণে আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি, তখন দুটি পত্রিকা সরকারি ছিল। আমি সেগুলো যখন বেসরকারি করে দিতে যাই বা সরকারি কোনো পত্রিকা থাকবে না, বন্ধ করে দিতে যাই, তখন এক সময়কার সমালোচকরা তারা যেহেতু সরকারি বেতন-টেতন পেতেন, তারা আন্দোলনও করে, অনশনও করে। কেন সেটা আমরা বন্ধ করব। তখন আমার বাবা নাকি রাষ্ট্রীয়করণ করেছে বলে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সমালোচনা করেছেন, এখনো করে যান। তার মানে রাষ্ট্রীয়করণ করে কোনো সংবাদপত্র রাখব না। এটা আমার সিদ্ধান্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আমি সবাইকে বলব একটা দায়িত্ববোধ নিয়ে চলতে হবে। দায়িত্ববোধটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। এরই মধ্যে আমাদের জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। গণমাধ্যমকর্মীদেরও চাকরি সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলি আইন, যেটা আগে কখনো ছিল না। তাছাড়া সম্প্রচার খাতে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের লক্ষে সম্প্রচার আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। এ কমিশনটা গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রচার আইনও আমরা করে দেব। যাতে করে আমি বলব, বাস্তবমুখী কাজ হয়। অহেতুক সমালোচনায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে যেন একটা হলুদ সাংবাদিকতা যেন না থাকে। আর অনলাইনেও অন্তত সমাজভিত্তিক, মানবিক কল্যাণ, মানুষের উন্নয়নের দিকে যেন কাজে দৃষ্টি থাকে, সেই ধরনের সাংবাদিকতাই যেন হয়।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২০)