শিতাংশু গুহ


করোনা নিয়ে ভয়ভীতি থাকলেও এখন টের পাওয়া যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোট এসেছে। নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ভোট সামনের মঙ্গলবার ৩রা নভেম্বর ২০২০। ২৪৫ মিলিয়ন ভোটার তাঁদের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। ইতোমধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। অনেক টেস্টে সশরীরে আগাম ভোট শুরু হয়েছে, নিউইয়র্কে এটি শুরু হয় শনিবার ২৪শে অক্টবর। এসব বিশেষ ব্যবস্থা করোনা ভাইরাসের সৌজন্যে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার (২৭ই অক্টবর) নিজেই টুইট করেছেন যে তিনি মিশিগানে ৩পয়েন্ট, উইসকনসিনে ২ পয়েন্ট, পেনসিলভানিয়ায় ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। আরো বলেছেন, ‘লাল ঢেউ’ ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য এক টুইটে বলেছেন, আগে ভোট দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চান, সশরীরে গিয়ে ভোট দিন। উল্লেখ্য যে, সশরীরে ভোট দিলে ডাকযোগে ভোট বাতিল হবে। হিলারি ক্লিন্টন ফক্স নিউজকে সোমবার (২৬ অক্টবর) বলেছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম জেতার সম্ভবনা আছে শুনে তাঁর বমি বমি লাগছে!

প্রায় সকল জরিপ বলছে বাইডেন এগিয়ে আছেন। নিউজ উইক বলেছে, ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেটের গ্রামাঞ্চলে ১১ পয়েন্টে ট্রাম্প পিছিয়ে? এসব জরিপ কতটা গ্রহণ যোগ্য? এরাই আবার বলছে, বাইডেন এগিয়ে থাকলেও ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন। তারা ২০১৬’র ইতিহাস টেনে বলছে, হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে ছিলেন, জিতেছেন ট্রাম্প। এবারো কি তাই হবে? খুব সম্ভবত: তাই! ট্রাম্প দ্রুত উঠে আসছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনি আস্থাশীল।

এবার আগাম ভোট দেয়ার অতীত সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে তাঁদের ভোট দিয়েছেন। আমি নিজেও আগাম ভোটটি ট্রামকে দিয়েছি গত রোববার। উভয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী শেষ সপ্তাহে এক ষ্টেট থেকে অন্য ষ্টেটে ছুটে বেড়াচ্ছেন। আইডিপি-টিআইপিপি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেটে ট্রাম্প স্পষ্টত: বাইডেনকে ধরে ফেলছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬-তে আইডিপি-টিআইপিপি’র জরিপ সঠিক হয়েছিলো।

সাধারণতঃ এদেশে ভোটের দিনই জানা যায় কে জিতেছেন। এবার এতো বেশি এবসেন্টি ভোট যে নির্বাচনী রাতে হয়তো ফলাফল নাও জানা যেতে পারে, যদিনা একচেটিয়া ভোটে কেউ একজন জয়ী হন। সেক্ষেত্রে রেজাল্ট জানা যাবে ১০ই নভেম্বর। মূলত: প্রধান দুইটি দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে কেউ একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন চার বছরের জন্যে।

জনগণের সরাসরি ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন না? তিনি নির্বাচিত হ’ন, ইলেকটোরাল ভোটে। মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট আছে, এরমধ্যে যিনি ২৭০টি ভোট পান, তিনি নির্বাচিত হন। এজন্যে ২৭০-হচ্ছে, ম্যাজিক নাম্বার। জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রতিটি ষ্টেটের কিছু ইলেকটোরাল ভোট থাকে। যেই প্রার্থী যেই ষ্টেটে জয়ী হ’ন তিনি সেই ষ্টেটের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পান। তবে মেইন ও নেব্রাস্কায় ইলেকটোরাল ভোট ভাগাভাগি হয়ে থাকে। মেইনে ৪টি এবং নেব্রাস্কায় ৫টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে।

ইলেকটোরাল ভোট-ব্যবস্থার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আল গোর এবং হিলারী ক্লিন্টন পপুলার ভোটে জিতেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। অর্থাৎ নির্বাচনটি জাতীয় পর্যায়ে হলেও সিদ্ধান্ত হয় ষ্টেট পর্যায়ে। ছোট-বড় সকল ষ্টেটের সমান গুরুত্ব বহাল রাখতে মার্কিন রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতারা এ ব্যবস্থাটি করে গেছেন। একই ভাবে এবং একই কারণে প্রতি ষ্টেট থেকে দুইজন সিনেটর নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১০/১২টি ষ্টেট ব্যাতিত প্রায় সকল ষ্টেট মূলত: ডেমক্রেট বা রিপাবলিকান শিবিরভুক্ত। ঐ ১০/১২টি ষ্টেটকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড ষ্টেট’ বলা হয়ে থাকে এবং প্রার্থীরা ঐসব ষ্টেটে প্রচার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এবারো ব্যতিক্রম নয়?

১৮ বছরের মার্কিন নাগরিক ভোটার হতে পারেন। ভোট দিতে হলে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কি শুধুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন? আসলে তা নয়, এবার কংগ্রেসের পুরো ৪৩৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, কিছু সিনেট, গভর্নর পদে লড়াই হচ্ছে। বর্তমানে হাউস বা কংগ্রেস ডেমক্রেটদের দখলে, সিনেট রিপাবলিকানদের। সর্বশেষ বিতর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তাঁরা হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন। এবার দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বয়স ৭০’র কোঠায়, ট্রাম্প ৭৪, বাইডেন ৭৮।

নিউজম্যাক্স জানাচ্ছে, শেষ বিতর্কে ট্রাম্পের ‘ট্রাম্পকার্ড’ কাজে লাগছে। আইডিবি/টিআইপিপি জরীপ জানাচ্ছে, ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্ধন্দী বাইডেনের সাথে ব্যবধান কমিয়ে আনছেন, যা এখন ৪৯-৪৫%। এই জরীপের ভুলভ্রান্তি ৩%, অর্থাৎ ট্রাম্প ধরে ফেলেছেন। ব্লিজ বলছে, ট্রাম্প বাম-দের ধূলিসাৎ করে জিতবেন। ব্লিজ জানাচ্ছে, ডেমক্রেটদের রেডিক্যাল এজেন্ডা ধ্বসে পড়ছে। কেউ কেউ বলছেন, বাইডেন যেদিন ঘোষণা করেছেন, তিনি একজন মহিলাকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নেবেন, সেদিনই তিনি হেরে গেছেন। তাঁর পুত্র হান্টার বাইডেন, এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা তাঁর জয়ের বিপক্ষে। শেষ বিতর্কে ‘তেল কোম্পানী বন্ধ করে দেয়ার কথা বলে ভুল করেছেন।

ফক্স নিউজকে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক হুক্কাবি বলেছেন, ট্রাম্প দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন, পক্ষান্তরে জো বাইডেন দেশকে ধ্বংসাত্নক ওবামা যুগে ফিরিয়ে নেবেন। নিউজম্যাক্স জানায়: হান্টার বাইডেনের সাবেক বিজনেস পার্টনার টনি বুবুলনস্কি এফবিআই’র সাথে কথা বলছেন। তিনি তাঁর ২০১৫, ২০১৭’র ২টি ফোন হস্তান্তরে সম্মত হয়েছেন। এরআগে টনি বুবুলনস্কি অভিযোগ করেছেন যে, জো বাইডেন তাঁর পুত্র সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছেন। নিউইয়র্ক পোষ্ট হান্টার বাইডেনকে নিয়ে বেশ ক’টি নিউজ প্রকাশ করে চলেছে। এই পত্রিকাটি ট্রামের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।